সারা বিশ্বে যত সম্পদ আছে তার ৫০ শতাংশ এখন ১ শতাংশ লোকের হাতে। ২০০৮ সালে আর্থিক মহামন্দার সময় শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর হাতে ছিল ৪২ শতাংশ সম্পদ। অর্থাৎ এক দশকের কম সময়ে বিশ্বে ধনী-গরিবের সম্পদ ব্যবধান আরও ৮ শতাংশ বেড়েছে।
ধনী-গরিবের সম্পদ-বৈষম্যের এমন চিত্র উঠে এসেছে ক্রেডিট সুইস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ‘ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ রিপোর্ট ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইসের গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সাল থেকে এই
প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে।
বর্তমানে বিশ্বে মোট সম্পদের পরিমাণ ২৮০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। তুলনা করলে বলা যায়, এই সম্পদ দিয়ে ৮০ হাজার পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব। পদ্মা সেতু বানাতে খরচ হচ্ছে ৩৫০ কোটি ডলার। গত এক বছরে বিশ্বে সম্পদ বেড়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০১২ সালের পর এক বছরে এত বেশি সম্পদ এ বছরই বেড়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে ১০ ডলার আছে এমন ব্যক্তি বা মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা সারা বিশ্বে এখন ৩ কোটি ৬০ লাখ, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩৭ লাখ। এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বে মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে ২৩ লাখ ৪৩ হাজার। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ১ কোটি ৫৩ লাখ মিলিয়নিয়ার আছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরে সবচেয়ে মিলিয়নিয়ার আছে যথাক্রমে জাপান ও যুক্তরাজ্যে। শীর্ষ দশে থাকা অন্য দেশগুলো হলো জার্মানি, চীন, ফ্রান্স, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়া।
ক্রমবর্ধমান সম্পদ-বৈষম্যের চিত্র প্রতিবেদনে তুলে ধরে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সংখ্যা এখন প্রায় ৫০০ কোটি। এর ৭০ শতাংশ বা ৩৫০ কোটি লোকের হাতে আছে ৭ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলার। এই ৩৫০ কোটি লোকের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ১০ হাজার ডলার বা তার কম। বিপরীতে ১ শতাংশ বা সাড়ে ৩ কোটি লোকের হাতে সম্পদ আছে ১২৯ ট্রিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বিশ্বের ৭০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক লোকের হাতে যে সম্পদ আছে তার চেয়ে ১৭ গুণ বেশি সম্পদ আছে মাত্র ১ শতাংশ লোকের হাতে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের নাম আছে কম সম্পদ থাকা দেশের তালিকায়। এ বিষয়ে বলা হয়েছে, ৫ হাজার থেকে ২৫ হাজার ডলার পর্যন্ত সম্পদ আছে বিশ্বে এমন মানুষের সংখ্যাই বেশি। এই দেশগুলোর মধ্যে আছে চীন, ভারত, রাশিয়া, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি। আর ৫ হাজার ডলারের কম সম্পদ আছে এমন দেশের বেশির ভাগই দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য আফ্রিকার। এর মধ্যে আছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে কার হাতে কত সম্পদ তার কোনো হিসাব পাওয়া যায় না। তবে আয়ের একটি চিত্র পাওয়া যায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা আয় ও ব্যয় জরিপ। এ জরিপের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশের সব মানুষের মোট আয়ের ৩৮ শতাংশই করেন ওপরের দিকে থাকা ১০ শতাংশ ধনী মানুষ। আর মোট আয়ের মাত্র ১ শতাংশ করেন সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষ।
জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বলেন, সম্পদ-বৈষম্য কমাতে হলে কর আদায় ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনতে হবে। যাঁরা বেশি আয় করেন, তাঁদের কাছে বেশি কর আদায় করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশে তুলনামূলক কম আয় করা লোকের ওপর কর দেওয়ার চাপ বেশি। সাধারণ মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মদক্ষতা উন্নয়নে বেশি বিনিয়োগের নীতি নিতে হবে। পশ্চিম ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ এই নীতি অনুসরণ করে সম্পদ-বৈষম্য কমিয়ে আনতে সফল হয়েছে।সূত্র: প্রথম আলো।