ঢাকার বেশ কটি টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকার অফিস যেই কারওয়ানবাজারে, সেই কারওয়ানবাজারে সন্ধ্যের পরে গণমাধ্যম কর্মীদের আড্ডা দেয়ার একটি জায়গা আছে, যেখানে প্রতিদিন রাতে গড়ে ৫০/৬০ সাংবাদিক তাদের কাজ শেষ হওয়ার পর আড্ডায় যোগ দেন।
সে আড্ডার প্রাণবন্ত অংশীদারদের একজন ছিলেন উৎপল দাস। জন্মদিন কিংবা নানা খুশীর দিনগুলোতে কেক কাটার উদ্যোগ নেয়ার জন্য বন্ধু সহকর্মীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় এ তরুণের নিজেরই ২৯তম জন্মদিন আজ।
কিন্তু কেকের বদলে তার জন্মদিনে বন্ধু সহকর্মীরা কিছুক্ষণ আগে কারওয়ানবাজারের সেই রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলেন ২৯টি মোমবাতি হাতে, অশ্রুসজল চোখে তারা নিখোঁজ উৎপলের সন্ধান চেয়েছেন তারা।
এ কর্মসূচির উদ্যোক্তাদের একজন ঢাকার সাংবাদিক রাজীব আহমদ বলছেন, “আজ উৎপলের ২৯তম জন্মদিন। ওকে কেউ ধরে নেবে বা তুলে নেবে এমন ধারণাও করতে পারিনা। কিন্তু গত বিশ দিনেও তার সন্ধান না পেয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। আমরা বিশ্বাস করতে চাই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উৎপলকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন”।
বন্ধুদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী উৎপল দাস ফেসবুকে নানা ইস্যুতে নিজের মতামত তুলে ধরতেন যা নিয়ে বন্ধুমহলেও কমবেশি বিতর্ক হতো। ইত্তেফাক ও যায়যায়দিনের মতো পত্রিকায় কাজ করে এখন কাজ করছিলেন একটি অনলাইন পোর্টালে।
মাঝে মধ্যেই বন্ধুদের না জানিয়ে বেড়াতে যাওয়ার স্বভাবও ছিলো তার। আর সে কারণেই ১০ অক্টোবর থেকেই নিখোঁজ হলেও প্রথম কয়েকদিন উৎপলের অনুপস্থিতি তাদের দৃষ্টিতে আসেনি।
কিন্তু পরে যখন বোঝা গেলো তখন বন্ধুদের কয়েকজন বিষয়টি তার পরিবারের দৃষ্টিতে নিলে তার পিতা চিত্তরঞ্জন দাস মতিঝিল থানায় জিডি করেন ও পরে সংবাদ সম্মেলনে প্রিয় সন্তানকে খুঁজে পেতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও অনুরোধ জানান তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু এর মধ্যেই উৎপলের নাম্বার ব্যবহার করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ফোন দেয় তার পিতার নাম্বারে।
চিত্তরঞ্জন দাস বিবিসিকে বলেন, “২৩ অক্টোবর উৎপলের দুটি নাম্বার থেকে ফোন করে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। তবে তারা পরিচয় দেয়নি। আমি বলেছি টাকা দিবো কিন্তু ছেলের সাথে কথা বলতে হবে। এরপর মোবাইল বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর ২৪অক্টোবরর সকাল সাড়ে আটটায় আবার ফোন আসে। বলেছি ছেলেকে দেখবো ও টাকা দিবো।তারপর ছেলেকে ছেড়ে দিতে হবে। এরপর তারা ফোন বন্ধ করে দেয়”।
এরপর থেকেই আর কোন যোগাযোগ না হলেও উৎপলের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে মাঝে মধ্যে নানা জনের কাছে বার্তা যাচ্ছে বলেও জানা গেছে। এদিক উৎপলের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দেশের সাংবাদিক সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলছেন কালই তারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করবেন, পাশাপাশি কর্মসূচিও দিয়েছেন যাতে করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো তৎপর হয় উৎপলকে উদ্ধারে।
তিনি বলেন, “আমরা দাবি জানাতে পারি কিংবা কর্মসূচি দিতে পারি কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তাকে উদ্ধার জরুরী। আমরা বিশ্বাস করতে চাই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগেও এমন রহস্যের সমাধান করেছেন। আমরা সেই ভরসা রাখতে চাই। তাদের প্রতি অনুরোধ করতে চাই যত দ্রুত সম্ভব তাকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করা হোক”।
তবে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি উৎপল দাসের বন্ধু, সহকর্মী কিংবা সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এতো প্রত্যাশা করছেন সেই পুলিশ বলছেন তারা তদন্ত করছেন কিন্তু উৎপল দাসের সন্ধান পাওয়ার ক্ষেত্রে কোন অগ্রগতি এখন পর্যন্ত নেই।