সড়ক দুর্ঘটনায় আজ কেবল টাঙ্গাইল সড়কেই ঝরেছে ১১ জন মানুষের প্রাণ। পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে কয়েকজন নারী ও শিশু আছেন।
মধুপুরে বাস-ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে এক নারীসহ চারজন এবং মির্জাপুরে একই ধরনের দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। কালিহাতীতে প্রাইভেট কারের সঙ্গে সংঘর্ষে মোটরসাইকেলে থাকা দুই আরোহী নিহত হন।
এর আগে গতকাল শুক্রবার ভোরেও কালিহাতী উপজেলার পৌলী এলাকায় টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ওপর বাস উল্টে পাঁচজন নিহত ও ২৫ জন আহত হন।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, টাঙ্গাইল থেকে ময়মনসিংহগামী একটি বাস সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে মধুপুর পৌর এলাকার নরকোনা এলাকায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা মালবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে বাসের ৪ জন নিহত ও ১৯ জন আহত হয়েছে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন মধুপুর উপজেলার টিকরী গ্রামের আবদুর রহমানের ছেলে লিটন (২২), একই গ্রামের সালমা (২৩), পোদ্দার বাড়ি গ্রামের সমশের আলীর ছেলে রজব আলী (৬০) ও অজ্ঞাত একজন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি জানান, মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর গুরুতর আহত ১৩ জনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং তিনজনকে ঘাটাইলের সিএমএইচে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। অপর তিনজনকে মধুপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
নিহত চারজনের প্রত্যেক পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা করে সহযোগিতা করেছেন ইউএনও। এ ছাড়া আহত প্রত্যেককে চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে দুই হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সকালে মির্জাপুরের দুর্ঘটনা সম্পর্কে পুলিশ জানায়, যাত্রীবাহী বাসটি কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে আসছিল। ইটবোঝাই ট্রাকটি বিপরীত দিক দিয়ে টাঙ্গাইলের দিকে আসছিল। সকাল সোয়া সাতটার দিকে ইচাইল নামক এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাড়ি দুটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই এক নারী ও এক শিশু নিহত হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় একজন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুজন মারা যায়। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন।
গোড়াই হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম জানান, নিহত পাঁচজনের মধ্যে দুজন নারী, একজন পুরুষ ও দুটি শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে এক নারীর নাম-পরিচয় জানা গেছে। তাঁর নাম সালমা বেগম। স্বামী মমিনুল ইসলাম। বাড়ি কুড়িগ্রাম। আহত ব্যক্তিদের মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের ভাষ্য, হতাহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই পোশাক কারখানার শ্রমিক। নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আহত প্রত্যেক ব্যক্তিকে দেওয়া হবে ১০ হাজার টাকা।
অপর দুর্ঘটনা সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছাবুর রহমান জানান, গাইবান্ধা থেকে মোটরসাইকেলে করে দুজন ঢাকায় যাচ্ছিল। সকাল সোয়া নয়টার দিকে কালিহাতী উপজেলার আনালিয়াবাড়ি এলাকায় বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কের পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি প্রাইভেট কারের সঙ্গে মোটরসাইকেলটির সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেল আরোহী তৌহিদ হোসেন নিহত হন। তিনি গাইবান্ধা সদর উপজেলার আনিয়ারজান গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে। মোটরসাইকেলের অপর আরোহী আহত মোখলেছুর রহমান দীপ্তকে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। মোখলেছুর গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ভাঙ্গামোড় এলাকার লুৎফর রহমানের ছেলে।
নিহত দুজনের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া মোবাইল থেকে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ।