Latest News
কালিহাতীতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
মে ১৮, ২০২৪
গোবিন্দগঞ্জে ২১ কেজি গাঁজা জব্দ
মে ১৮, ২০২৪
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
।। মাহবুব রহমান ।।
দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে একটি বিশেষ সময়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়ে জন্মলগ্ন থেকে কাজ করে আসছে টিআইবি বা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল নামক পশ্চিমা মদদপুষ্ট এনজিওটি। এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ড. মোজাফ্ফর আহমেদ যে চক্রবদ্ধ স্বার্থ উদ্ধারের জাল বিছিয়ে ছিল, পর্যায়ক্রমে তা অব্যহত রেখে চলেছেন সংস্থাটির বর্তমান চেয়াম্যান ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা। এই প্রতিষ্ঠানটির নানাবিধ গবেষণার টার্গেটগুলো লক্ষ্যনীয়। যা দেশের গণতন্ত্র, উন্নয়ন, সামাজিক সাম্য ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রগুলোকে বিভ্রান্ত করতে অসংখ্যবার ব্যবহার করেছে।
এছাড়া এই সংস্থাটি শুরু থেকেই দেশ ও দেশের কল্যাণের পরিবর্তে বিশেষ গোষ্ঠিচক্র বা সমাজ বিরোধী রাজনৈতিক প্লাটফর্মগুলোকে পুনঃজীবিত রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এদের মতলবি কর্মকান্ডের মধ্যদিয়ে সাহাবুদ্দিন- লতিফুরের তত্বাবধায়ক সরকারের ২০০১ এর অক্টোবর নির্বাচন, বিএনপি-জামাত জোটকে ক্ষমতায় পূর্নবাসন এবং অজও বিভ্রান্তমূলক কর্মকান্ডের মধ্যদিয়ে ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দীনদের ক্ষমতাসীন করা হয়। এদের প্রপাগন্ডার কারনে তৎকালিন গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ব্যর্থ করার চেষ্টা হয়েছিল। এমনটি তৎকালিন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে কারাবদ্ধ করার র্স্পধা পেয়েছিল ১/১১ সরকার। টিআইবির কান্ডারীরা তখন কী কী করেছিল দেশের মানুষ যে ভূলে গেছে, সেটা ভাবার কোন কারন নেই। অন্যান্য এইজিওদের মত টিআইবি কাজ করছে বলা যাবেনা। এদের টার্গেট মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল ও এই দলের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে বিতর্কিত করা।
টিআইবির ২০০০ সালে দুর্নীতি বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশকে কালিমালিপ্ত করার স্পর্ধা দেখিয়েছিল। যার সূত্রধরে গণমাধ্যমে প্রপাগান্ডার সূত্রপাত এবং সাহাবুদ্দিন- লতিফুরের ছত্রছায়ায় জামাত-বিএনপি তথা যুদ্ধাপরাধী চক্রকে ক্ষমতাসীন করা হয়। জামাত-বিএনপি জোটের নির্দয় খুন রাহাজানি- সংখ্যালঘু পীড়নে গোটা দেশ পরিণত হয়েছিল রামশীল- লালমোহনে। পূর্ণীমা, গোপাল কৃষ্ণ মহুরী ও নাম না জানা হাজার হাজার মানুষের খুন ও রক্তাক্ত জনপদের কথা এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। যাদের ক্ষমতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে এত বড় ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়েছিল, তাদের পুরধা ছিল এদেশের কথিত সমাজসেবী এনজিও এবং তাদের পৃষ্ঠপোষক কিছু গণমাধ্যম। আর্ন্তজাতিক বলয়ের আর্শিবাদে তখন দেশ জুড়ে এত যে নৃশংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল তা প্রতিহত করতে কোন সামাজিক বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। কেবলমাত্র আওয়ামীলীগ, সম্মীলিত সংস্কৃতিক জোট এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি প্রতিবাদ জানাতে রাজপথে নেমেছিল। এর পরিনাম হয়েছিল আরো ভয়াবহ। ড. মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবিরকে নির্দয় ভাবে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। আওয়ামীলীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব সহ দলের হাজার হাজার কর্মীকে হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছিল। তখনকার দেশান্তরিত মানুষের সংখা আজও কী নিরুপন করা হয়েছে?
জামাত-বিএনপি জোট জমানার ভয়ংকর সহ ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগ গণআন্দোলন গড়ে তুললে এদেশের শীর্ষস্থানীয় এনজিওগুলো নাগরিক ফোরামের ব্যানার ঝুলিয়ে জোট সরকারের সমর্থকের ভুমিকা পালন করেছে। এদের মুখের বুলি ছিল- কালো টাকা মুক্ত নির্বাচন চাই। জেলায় জেলায় তৎকালিন বিএনপি-জামাতের নেতাদের সরাসরি উপস্থিতি ও পৃষ্ঠপোষকতায় সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো আগাম নির্বাচনী ক্যাম্পেইন শুরু করেছিল। গণমাধ্যমে এসব সংবাদ ফলাও করে প্রচার হয়েছে। কালো টাকা ও দূর্নীতিমুক্ত নির্বাচনের প্রবক্তাদের কিছু দিন পরেই খুজে পাওয়া গেল জেনারেল মঈনউদ্দিনের “শান্তির স্বপ্নে” বইয়ের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে। সিপিডি’র ফেলো অবশ্য ততক্ষনে জেনেভায় পোষ্টিংটি বাগিয়ে নিয়েছেন।
টিআইবির সেই চেয়ারম্যানের টার্গেট এবং বাস্তবতা দেশের মানুষ ভুলে যায়নি। টিআইবি পরবর্তীকালে আরো যা যা করেছে বা করছে তার ফিরিস্তি না টেনেও বলা যায়, এসকল পশ্চিমা মদদপুষ্ট এনজিওদের কথিত সমাজ সেবার ধরন গুলোকে জবাব দিহিতায় আনার জন্যই সরকার এনজিও নিয়ন্ত্রন আইন প্রনয়ন করেছে। যার বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই রুষ্ট এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তারা। এই কর্তাদের সামাজিক পরিচিতি, তাদের উদ্দেশ্য এবং স্বার্থান্ধতার বিরুদ্ধে বহুবার প্রতিবাদ উঠেছে। দেশের সচেতন মানুষ এনজিও নামক এসব কুচক্রিমহলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবীও জানিয়েছে। কিন্তু স্বার্থান্ধ ও সুযোগ সন্ধানি কতিপয় গণমাধ্যমের পৃষ্ঠপোষকতায় এদের বল্গাহীন মিথ্যাচার দেশের মানুষকে সহ্য করতে হচ্ছে। টিআইবির আস্ফালন ও স্পর্ধার সর্বশেষ উদাহরন হলো, সংসদে বিরোধী দলের ভুমিকা বিষয়ে তাদের গবেষনা প্রতিবেদন প্রকাশ। প্রতিবেদনটিতে সংসদে বিরোধী দল কতটা সক্রিয় এ বিষয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি হলেও প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে টিআইবির শীর্ষ কর্তারা ’শীবের গীত’ গেয়েছেন। তাদের টার্গেটটি পুরন করার চেষ্টা করেছেন। টিআইবির এই উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদনটি যখন প্রকাশ করা হয়েছে তার সপ্তাহ খানেক আগে বাংলাদেশে আইপিইউ এর শীর্ষ সম্মেলনটির ‘ঢাকা ঘোষণার বার্তা’ নিয়ে ১৩১টি দেশের সম্মানিত অতিথীরা যার যার দেশে ফিরে গেছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা ঘোষণার তাৎপর্যকে ম্লান করতেই টিআইবি তাদের সর্বশেষ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে। টিআইবি কোন গোষ্ঠী স্বার্থ রক্ষা করছে সেদিকে নজর দেয়া দরকার। ঢাকায় যখন আইপিইউ এর সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হচ্ছিল তখন বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন, দেশে যখন গণতন্ত্র নেই, সংসদ কার্যকর নেই, সেখানে এধরনের সম্মেলনের তাৎপর্য কোথায়? মির্জা ফখরুল এবং রিজভী আহমেদ নিত্যদিন টেলিভিশনের পর্দায় এসব বয়ান করেছে। মোদ্দাকথা, আইপিইউ সম্মেলনের আয়োজক দেশ বাংলাদেশ তথা আওয়ামীলীগকে কটাক্ষ করার জন্যই এসব বক্তব্য বিএনপি দিয়েছে। একই ভাবে টিআইবির প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য যে বেগম জিয়ার কথার প্রতিধ্বনি সেটি অনুধাবন করা সহজ। টিআইবির সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকার গবেষণা করতে নেমে গণমাধ্যমে যা বলেছে, সেটি লক্ষ্যনীয়। টিআইবির চেয়াম্যান সুলতানা কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, আমাদের প্রতিবেদন থেকে এই উপসংহারে পৌছানো যাবেনা যে, টিআইবি বলছে এই সংসদ অনেক বেশি কার্যকর হচ্ছে। আমরা দেখি সংসদ কার্যকর করতে জনগনের মতামতকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে সংসদ পরিচালনা করার কথা, বাস্তবে তা হয়নি। তিনি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকার বিষয়ে ব্যাখ্যা না দিয়ে বরং গবেষনা প্রতিবেদনের পরিবর্তে নিজের উদ্দেশ্যকে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সব আন্তর্জাতিক চুক্তি সর্ম্পকে জনগনের জানার অধিকার রয়েছে, সেটা জনগনকে না জানানো অসাংবিধানিক। তিনি প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরে করা বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়কে ইঙ্গিত করে বলেছেন, সংবিধান যেহেতু বলেছে সব কিছুর মালিক জনগন, জনপ্রতিনিধিরা জনগনের মতামত নেয়ার বিষয়টি পরিষ্কার করছে না, কিছুই বলছে না। সংসদ কার্যকর করতে জনগনের মতামতকে যেভাবে গুরুত্ব দিয়ে সংসদ পরিচালনা করার কথা বাস্তবে তা হয়নি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখার প্রতিবেদনের অজস্র ব্যাখ্যায় বলেছেন, জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট চুক্তি ছাড়া সম্পাদিত সব আন্তর্জাতিক চুক্তি রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে জাতীয় সংসদে উপস্থাপনার নির্দেশনা থাকলেও ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে স্বাক্ষরিত ৬৯টি চুক্তি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি।
এমাসের শুরুতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আইপিইউ সম্মেলন এবং প্রধানমন্ত্রীর চারদিনের ভারত সফর যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সফল বলে সকল মহল থেকে অভিহিত করা হচ্ছে, ঠিক সেই মুহুর্তে টিআইবি নামক বিতর্কিত এনজিও সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের ধরন ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়।
এসব প্রতিষ্ঠানে মদদ দাতা দেশগুলো যে উদ্দেশ্য নিয়ে আইপিইউএর কোন কোন সিদ্ধান্তে দ্বিমত পোষন করে সম্মেলনে বিতর্কিত হয়েছেন, একই ভাবে টিআইবির কর্তারা প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ও সেখানে সম্পাদিত চুক্তি নিয়ে যেভাবে কটাক্ষ করছেন, সেসব যে একই সূত্রে গাথা তার প্রমান খুজতে বেশি দুলে যেতে হবে না। বেগম জিয়ার দেশ বিক্রি করার উক্তি, মির্জা ফখরুলের উদ্বেগ- উৎকন্ঠা, রিজভী আহমদের অন্তঃসার গলাবাজি এবং গয়েশ্বর চন্দ্রের গুরুগম্ভীর বক্তব্যের দিয়ে তাকালেই পরিষ্কার হয়ে যাবে- টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের মোক্ষম সময়টি কাদের মস্তিষ্ক প্রসুত এবং কোন চক্রের স্বার্থ সংরক্ষনের উদ্দেশ্যে নিবেদিত। দেশের ভাবমুর্তি ও মর্যাদা ম্লান করতে কথাকথিত রাজনৈতিক চক্র বা গোষ্ঠি ও সংস্থা এদেশে আবার যে তৎপর হয়ে উঠতে চাইছে, এটি তারই উদাহরন।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক
Our facebook page