Latest News
কালিহাতীতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
মে ১৮, ২০২৪
গোবিন্দগঞ্জে ২১ কেজি গাঁজা জব্দ
মে ১৮, ২০২৪
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
বহুদিনের অপেক্ষা প্রায় শেষ। বলতে গেলে ৪৫ বৎসরের অপেক্ষা। বহুবার বলেছি, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া উচিৎ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দিলেন, তা হতে চলেছে। যেহেতু শেখ হাসিনার আছে শহদীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। ফেসবুকে দেখলাম, ছোটবোন শমী কায়সার আর শাহরিয়ার কবির ভাইয়েরা এই ঘোষণা শুনে আনন্দে কেক কেটেছেন। আমিও লন্ডনে অফিসে জয় বাংলা বলে একা একা আনন্দ প্রকাশ করলাম। আমর সহকর্মী জিজ্ঞেস করলো কেন হঠাৎ এত আনন্দ! বললাম, জীবনের একটা বড় ইচ্ছা আজ পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল শেখ হাসিনা এই দাবিটা পূরণ করবেন। কারণ এই দেশে উনি ছাড়া আমাদের আবেগের, আনন্দের বা ব্যথার কথা কে বুঝবেন? না, আমি তাঁর সাফাই গাইছি না, উনি এসব চেনেন আর পছন্দও করেন না। আর সাফাই গেয়ে আমার কী লাভ! প্রধানমন্ত্রী আমাকে এ পর্যন্ত যা দিয়েছেন তা আমার চিন্তার বাইরে। আমি চিরকৃতজ্ঞ। সবই সত্য।
২০০১ সালে যারা জামাত নেতা আর যুদ্ধাপরাধীদের পতাকা দিয়ে দিলেন, তাদের না, আমাদের পতাকা সম্মান পাবে না, তারা সম্মান দেখাতে চান। তারা কি মুক্তিযুদ্ধ বা আমাদের মতো মানুষদের আবেগ, আনন্দ বা ব্যথা বুঝবেন কখনো?
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো দিবস। ঢাকা শহরে শুরু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বাঙালি নিধন। নির্বিচারে হাজার, হাজার মানুষ হত্যা হয়, পুরুষ-নারী আর শিশু।
আমি ছিলাম চট্রগ্রামে। চোখের সামন দেখলাম ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে বিহারিরা বাঙালি মারছে। তারপর শুরু হলো মুহুর্মুহু গুলি। আমার বাবা তখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।
জানালা দিয়ে তাকিয়ে বললেন- ‘আমাদের যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। আমাদের বাংলাদেশের জন্য যুদ্ধ। ওরা পারবে না। আশা করি ভারত আমাদের স্বীকৃতি দিয়ে দিবে তখন পাকিস্তান আর কিছুই করতে পারবে না।’
ভারতের স্বীকৃতি আসেনি, বাবা কিছুদিনের মধ্যেই যুদ্ধে চলে গেলেন। কিন্তু ১৭ এপ্রিল ধরা পড়লেন এবং শহীদ হলেন। আমার মা আমাদের নিয়ে পালানোর সময় দেখলাম রাস্তায় কত মানুষ রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, রক্ত পচা গন্ধ বাতাসে।
তখন মাত্র ১০ বছর বয়স আমার। খুব কষ্ট হচ্ছিল, আম্মাকে জিজ্ঞেস করেছি, কী হচ্ছে। কেন এত মানুষ মেরে ফেলা হয়েছে। উত্তর পাইনি। মা তখন শুধু কাঁদছেন আর আমাদের নিয়ে চিন্তিত। পাকিস্তানি সেনারা আমাদের মারতে গিয়েও মারেনি। জানি না কেন। মারলেই হয়তো ভালো হতো।
বিদেশিরা বলে, এমন গণহত্যা তারা দেখেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হিসাব- ত্রিশ লাখ মানুষ মারা গেছে এই গণহত্যায়। অথচ একটা স্বার্থান্বেষী মহল এ হিসাবকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে আজও। কিন্তু যারা নিরপেক্ষ তারা বলছেন, মৃত্যুর সংখ্যা তার চেয়েও বেশি হতে পারে।
আমারও তাই মনে হয়। প্রতিদিন কত মানুষ মারা গেছে আমরা যদি তার একটা গড় হিসাব করি তাহলে তো আরো অনেক বেশি হবে।
বহুদিন পাকিস্তানপন্থী বিএনপি-জামাতের হাতে দেশ থাকায় এই হিসাব নিয়ে খেলা হয়। ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়। কিন্তু লাভ হয়নি। কারণ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসে এই বিষয়গুলোকে বাস্তবতার সঙ্গে এবং বাঙালি জাতির চাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করে যাচ্ছে।
তাই এখনই সময় ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। পৃথিবী আরও জানুক ওই দিন কীভাবে বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, আর তাই তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
পারভেজ মোশাররফ বলে গেছেন, ওনারা দুঃখিত। কিন্তু আমরা বাঙালি জাতি তা গ্রহণ করেনি। আমরা চাই নিঃশর্ত ক্ষমা। আমি আশা করি, সে দিন দূরে নয়। সে দিন আমরা আবার বলবো- জয় বাংলা, জয়তু শেখ হাসিনা।
নাদীম কাদির : সাংবাদিকতায় জাতিসংঘের ড্যাগ হ্যামারসোল্ড স্কলার এবং লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার।
nadeemqaadir1960@ gmail.com
Our facebook page