বিশেষ প্রতিনিধি, পলাশ (নরসিংদী) থেকে ফিরে »
ছিপছিপে গড়ন। খোচা খোচা দাড়ি। আগে-পিছে গাড়ি। হাই ভোল্টেজের হাই। নাম তার সাবেরুল হাই। তার অনেক ক্ষমতার কারণে লোকে তাকে ‘হাই ভোল্টেজের হাই’ বলেই ডাকে। তবে সেটাও ভয়ে। কারণ, কথা যদি তার কান অবধি পৌছে, তাহলে-তো আর রক্ষা নেই।
নরসিংদী জেলার পলাশ থানার ডাঙ্গা ইউনিয়ন চলে তার অঙ্গুলির নির্দেশনায়। কি থানা, কি ভূমি অফিস, কিংবা মাদক বাণিজ্য সবই তার নখদর্পণে। এক সময়কার ডাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ভোল পাল্টে এখন আওয়ামীলীগ নেতা বনে গেছে। আর দলীয় ক্ষমতার প্রভাবে সে এখন এতোই বেপোরোয়া যে, ডাঙ্গাবাসীর কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হিসাবে পরিচিত।
নিউজ১৯৭১ এর অনুসন্ধানে মিলেছে নানা চমকপ্রদ সব তথ্য। অনুসন্ধানে জানা যায়, ডাঙ্গা ইউনিয়নের শান্তান গ্রামের মোশারফুল হাইয়ের ছেলে সাবেরুল হাই। বাবার নামে কয়েক বিঘা জমি থাকলেও মধ্যবিক্ত পরিবারের ছেলে সাবেরুল হাই ছোটকাল থেকেই ছিলো বখাটে। বখাটে হওয়ার কারণে বাবা-মাও তাকে খারাপ চোখে দেখতো। বখে যাওয়া সাবেরুল হাই দিনে চুরি-চামারি আর রাতে মদ পান করে সময় পার করতো। তৎকালীন (৯১ সালে) বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ছিচকে চোর সাবেরুল ছাত্রদলের নেতা বনে যান।
পরে সে তৎকালীন মন্ত্রী ড. মঈন খানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিতি হয়ে ওঠেন। পর্যায়ক্রমে সে ডাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি পদ ভাগিয়ে নেয়। এরপর আর সাবেরুলের পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। শুরু করে চাদাঁবাজি ও জমি দখল। ঐ সময় ডাঙ্গা ইউনিয়নে কেউ ঘরবাড়ি কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করতে গেলে সাবেরুল বাহিনীকে চাঁদা দিতে হতো। বিভিন্ন আবাসন কোম্পানীর হয়ে সাধারণ মানুষের জমি দখল করে দিতো সাবেরুল ও তার বাহিনী। বিগত ৯১ থেকে ৯৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলের পাঁচ বছরে সাবেরুল প্রায় কয়েক কোটি টাকার মালিক বনে যায়।
এরপর ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে হাই ভোল্টেজের হাই হাওয়া হয়ে যায়। প্রায় ছয় বছর পালিয়ে বেড়ায় হাই। বিগত ২০০১ সালে পুনরায় বিএনপি ক্ষমতায় আসলে সাবেরুল হাই ও তার বাহিনী বীরদর্পে এলাকায় ফিরে শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। এ সময় সে আরো বেপোরোয়া হয়ে ওঠে। ঐ সময় ড. মঈন খানের নাম ভাঙ্গিয়ে ডাঙ্গা ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। ফুলে-ফেঁপে বেড়ে ওঠে সাবেরুলের সম্পদ।
স্থানীয়রা জানায়, গত ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর সাবেরুল হাই স্থানীয় এক নেতার সুবাদে আওয়ামীলীগে যোগদান করে। ধীরে ধীরে সে স্থানীয় সংসদ সদস্য আশ্রাফ খান পোটনের ভাগ্নে পোটলা টিপুর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এখন সে আওয়ামীলীগের মস্ত বড় নেতা। ডাঙ্গা ইউনিয়নের অনেক ত্যাগি-প্রবীণ নেতাকর্মী সাবেরুল ধারে-কাছে নেই।
বর্তমানে সাবেরুলের এতোই দাপট, দলের দুঃসময়ের কান্ডারী ও ত্যাগি নেতারা সবাই এখন কোনঠাসা। ক্ষমতার দাপটে সে সম্প্রতি শেষ হওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের চেয়ারম্যান নামক সোনার হরিণের টিকেট ছিনিয়ে নেন। অথচ দলে অনেক পুরনো ত্যাগি ও প্রবীণ নেতা রয়েছে। নির্বাচনে তাদের কোনরকম খোজও করা হয়নি। ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যহীন সাবেরুল জাল ভোট আর সিল মেরে জয়লাভ করেন।
কথিত রয়েছে, সোনার টিকেট কিনতে তাকে ৪০ লাখ টাকা গুণতে হয়েছে। আর সব কিছু ম্যানেজ করেছে পোটলা টিপু।
নিউজ১৯৭১-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, সাবেরুল হাই অনেক কিছুই ম্যানেজ করেন তার সুন্দরী স্ত্রীকে দিয়ে। কোনো তদবিরে সে তার স্ত্রীকে পাঠায় বলে জানান সাবেরুলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র। সূত্রটি আরো জানায়, এনিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কয়েকবার মনোমালিণ্য হয়েছে। বর্তমানেও তার সংসারে অশান্তি বিরাজ করছে। সাবেরুল হাই বাড়ি ফেরেন গভীর রাতে। এ নিয়েও দ্বন্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীর। সাবেরুল সবসময় পরনারী ও মদপানে আসক্ত থাকে।
এ বিষয়ে জানতে সাবেরুল হাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় নিউজ১৯৭১ এর পক্ষ থেকে। তিনি এসব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবী করে বলেন, আমি চেয়ারম্যান হওয়াতে আওয়ামীলীগের একটা অংশ অখুশি। তারাই আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে।