Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ফয়সাল আহমেদ, পিরোজপুর থেকে ফিরে
মাহবুবের বাবা মোস্তাহার দুয়ারী একাত্তুরে আমাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিছে, লুট পাট করে সব ছিনিয়ে নিছে। আর সেই রাজাকারের পোলা মাহাবুব এখন আমার চাকরীটাও খাইছে। স্বাধীন দেশেও ওরা রাজত্ব করছে আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে কষ্টে জীবনযাপন করছি। এভঅবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন পিরোজপুর শহরের মাছিমপুর মুসিদ বাড়ি এলাকার মৃত অজিত কুমার মুসিদের ছেলে সুদেব মুসিদ। তিনি পল্লী দারিদ্র বিমোচণ ফাউন্ডেশেনের পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা কার্যালয়ের দারিদ্র বিমোচণ কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করছিলেন। দীর্ঘ ২৩ বছর প্রতিষ্ঠানটিতে সুনামের সাথে চাকরি করে আসলেও কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সুদেব মুসিদকে চাকরিচ্যুত করে পিডিবিএফের এমডি মাহবুবুর রহমান। কেন আপনাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে?
জবাবে সুদেব মুসিদ নিউজ১৯৭১ডটকমকে ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন,‘ মাহবুবের বাড়ি আর আমার বাড়ি পাশপাশি এবং একই স্কুলের ছাত্র। ওর বাবা যে রাজাকার ছিলো, তাঁর বাবার নেতৃত্বেই যে আমাদের বাড়ি ঘর মুক্তিযুদ্ধের সময় আগুনে পুড়িয়ে ছিল। সেই পূর্ব শত্রুতার কারণেই আমাকে পিডিবিএফের এমডি হয়েই মাহবুব অন্যায়ভাবে আমাকে চাকরিচ্যুত করেন। সুদেব ক্ষুদ্ধ কণ্ঠে বলেন,‘ যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছে, হত্যাসহ লুটপাট করেছে সেই তারা এখন ক্ষমতার স্বাদ গ্রহন করছে। আর আমরা সব হারিয়ে এখন নির্যাতনের শিকার হচ্ছি সেই রাজাকারের সন্তানদের হাতে। ওরা এখন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের লোক সাজতে চায়। চাকরি হারিয়ে পরিবার নিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছি। ওরা গাড়ি বাড়ি নিয়ে বিলাসী জীবন পার করছে।
(পিডিবিএফের এমডি মাহবুবুর রহমান)
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পিডিবিএফের এমডি মাহবুবুর রহমানের বাবা মোস্তাক দুয়ারি ছিলেন পিরোজপুর শহরের ভয়ংকর রাজাকার। সেই সময় রাজাকার মোস্তাক দুয়ারির নাম শুনলেই শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আঁতকে উঠতেন। মোস্তাক দুয়ারির নেতৃত্বে শহরের শতশত বাড়ি ঘরে আগুন, লুটপাট থেকে শুরু ভয়ংকর নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছিল। সেই কথা এখনও নির্যাতনের শিকার সাধারণ মানুষ ভূলতে পারেনি। সেই ভয়ংকর রাজাকারের পুত্র মাহবুবুর রহমান এখন পিডিবিএফের এমডি। তিনি প্রতিষ্ঠানটি অবৈধভাবে এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই নজিরবিহীন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। নিয়োগ, পদোন্নতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়া সরকারি প্রকল্পের শত শত কোটি নামেমাত্র কাজ করে নিজেরা ভাগভাটোয়ারা করে নিয়েছেন। শুধু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটির টাকা ঋণ বিতরণের নামেও হরিলুট করা হয়েছে। সরকারি এবং বেরসরকারি বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদনের মাহবুবুরে দুর্নীতির চিত্র উঠে এসেছে। তাঁর দুর্নীতি আর অনিয়ম তদন্ত করছেন দুর্নীতি দমন কমিনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়।
সুদেব মুসিদ ন্যায় বিচার চেয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের সচিব ড.প্রশান্ত কুমার রায়ের কাছে একটি লিখিত অভিযোগও করেন। সেই অভিযোগে বলা আছে, পিরোজপুর সদরে একাত্তুর সালে শান্তি কমিটির নেতা মোস্তাহার দুয়ারী আমাদের বাড়ি ঘরে আগুন দিয়েছে, আমাদের ভিটে মাটি ছাড়া করেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের কালেমা পড়ে মুসলমান হতে বাধ্য করেছে। আজকে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরে কুখ্যাত রাজাকার পুত্রের হাতে আমরা এখন সংখ্যালগু হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছি। অন্যায়ভাবেই রাজাকারের পুত্র আমাকে চাকরিচ্যুতও করেছেন। আমি সেই অন্যায়ের বিচার চাই।
শুধু আমাকেই নয়- উপজেলা দারিদ্র বিমোচন কর্মকর্তা পুলক দাস, দুই মাঠকর্মী লিপিকা ওজা ও রাধা রাণী সমদ্দারসহ অনেককেই অন্যায়ভাবে চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। চাকরিচ্যুত করেই ক্ষান্ত নেই মাহবুব, এখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আমাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাঁর ভয়ে এখন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় প্রতিটা মুহূর্ত কাটছে তার।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব প্রশান্ত কুমার রায় বলেন,‘ মাহবুবের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, বোর্ড মিটিং কল করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা পার পাবে না। এই দেশটা তো কাউকে লিজ দিয়ে দেয়া হয়নি। এমডির পদকে আকড়ে রাখতে ভূয়া গেজেট করা হয়েছিল, সেটা আমার নির্দেশে বাতিল করা হয়েছে। জালিয়াতির কোন ঠাই নেই আমার কাছে।
মুক্তি বাহিনীর ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদও পিডিবিএফের এমডি মাহবুবুর রহমানের বাবাকে রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশনের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমানের পিতা মোস্তাহার দূয়ারী ১৯৭১ সনে স্বাধীনতা বিরোধী একজন লোক হিসেবে পরিচিত। মহান মুক্তি যুদ্ধের সময়কালীন মোস্তাহারের পরিবার স্বাধীনতা বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিল। ওই পরিবারটি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী রাজনীতির ধারক- বাহক। স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে স্বাধীনতা বিরোধী অপকর্মের জন্য স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সে জেল খাটে। একইমত পোষন করেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এ একে এম আব্দুল আউয়াল। তিনিও মাহবুবের বাবাবে ভয়ংকর রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করেন। পিরোজপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নান্না পোদ্দার বলেন, মোস্তাহার আলী দূয়ারী পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মিলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নানা কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। সে ছিল একজন স্বাধীনতাবিরোধী ভয়ংকর রাজাকার
Our facebook page