Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
« রাসেল আহমেদ ও ফজলুল করিম, টেকনাফ থেকে »
টেকনাফে আসার ঠিক দশ দিন আগের কথা। ৬ কি ৭ ডিসেম্বর। ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না রহিমা খাতুন। তার বয়সও কম নয়। চুলে পাক ধরেছে। অনেক কিছুই মনে রাখতে পারেন না। চোখের সামনে দেখেছেন অনেক বীভৎসতা। দেখেছেন নোংরামি। নিজের সামনেই পরিবারের সবাইকে হত্যা আর পুত্রবধূকে নির্যাতনের ঘটনা দেখতে হয়েছে তাকে।
কয়েকবার মিয়ানমারের সেনাদের সামনে পড়েছেন তিনি। বয়স হওয়ায় লাঠিপেটা দিয়েছে তাকে। দু’জায়গায় সেনারা তাকে মেরে ফেলারও সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু কেন জানি পরে ছেড়ে দেয়। এভাবে মরতে মরতে বেঁচে গেছেন রহিমা খাতুন। মায়ানমারের গৌজিবির এলাকার রহিমা খাতুন বর্তমানে আশ্রয় নিয়েছেন উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের নয়নতারা ক্রেশ সেন্টারে।
সরেজমিনে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা মেলে রহিমা খাতুনের। বয়স ৬৫ ছুঁই-ছুঁই। ছিপছাপ গড়ন। মাথায় পাকা চুল। সাংবাদিক আর ক্যামেরা দেখে দৌঁড়ে আসেন তিনি। বলতে থাকেন ‘আমার খবর নেন, আমার খবর নেন…’। যেনো এক ব্যাকুলতা। নাম জিজ্ঞেস করতেই কাঁদতে শুরু করেন।
ঘটনার বর্ণনা জানতে চাইলে রহিমা বলেন, ১০ দিন আগের কথা। হঠাৎ আর্মি আইসা ঘেরাও করে পরিবারের সকলেরে। এ সময় ঘরে বসা ছিলো স্বামী আব্দুল খালেক, ছেলে আব্দুর রহিম, পুত্রবধূ রেহেনা আক্তার, দুই নাতনী হামিদা ও রাশেদা। এ সময় এক আর্মি পুত্রবধূর গলায় ছুরি ধরে রাখে। আর দু’জন সবার সামনেই তাকে ধর্ষণ করে।
তিনি আরো জানান, পরে সবাইকে ধরে নিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করে হত্যা করে সেনা সদস্যরা। ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। একজন তাকে পালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। সবাইকে ওই অবস্থায় রেখে পালাতে মন সায় দেয়নি। কিন্তু যখন দেখলেন সবাই চিরতরে চলে গেছেন, তখন দৌঁড়ে পালিয়ে যান।
তিনি জানান, কিছুদূর গেলে এক আর্মি আটক করে তাকে। আবারও নানা প্রশ্ন করেন। পরে বন্দুকের নল দিয়ে কয়েকবার আঘাত করে। তাতেও রক্ষা নেই। আরেকটু এগোনোর পরে আবারও আর্মির মুখোমুখি। তখন একজন তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। হাতজোড় করে অনেক আকুতি-মিনতির পরে বেঁচে আসেন। অন্ধকার রাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে চলে আসেন বাংলাদেশে।
তিনি বলেন, কয়েকদিন না খাইয়া জঙ্গলে-জঙ্গলে কাটাইছি। জীবন যে কতো কষ্টের বাজান তা বুঝবার পারছি। কার মনে মানবো কন দেহি। এইভাবে চোখের সামনে সবাইরে মাইরা ফালাইছে আবার ছেলের বউরে জুলুম করছে। আল্লাহ তোমার দুনিয়াতে কি বিচার নাই। তুমি কি এই জানোয়ারগো হাত থেইক্যা মুসলমানগো বাঁচাইবানা আল্লাহ। এ সময় তিনি কাপড়ের আঁচল তুলে মোনাজাত করেন।
শুধু রহিমা খাতুন নন, মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতনের শিকার হয়ে প্রতিদিনই রোহিঙ্গা মুসলমানরা নিগৃহীত হচ্ছেন। হত্যার শিকার হচ্ছেন অনেকে। জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাড়িঘর। ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন সুন্দরী তরুণী নারীরা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রশ্ন-এর শেষ কোথায়?
Our facebook page