Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সাবলম্বী করতে গড়ে তোলা হয় পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) নামের সংস্থাটি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির র্শীষস্থানীয় কয়েকজন কর্মকর্তা দারিদ্র বিমোচনের জন্য বরাদ্দের টাকা লুটপাট করে নিজেদের ভাগ্য বদলে ফেলেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ফলে দারিদ্র বিমোচনের নামে প্রতিষ্ঠানটির নেওয়া নানা কর্মকাণ্ড দরদ্রিদের ভাগ্যোন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেনি। সংস্থাটিতে দুর্ণীতি-অনিয়মের দায়ে অভিযুক্ত, এমনকি দুদকের মামলার আসামি এমন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি ঘটলওে নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের পদোন্নতি হচ্ছে না। এমনকি কাউকে কাউকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বদলি করা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ের ৩০০ কর্মচারীর ইনক্রিমেন্ট হচ্ছে না বছরের পর বছর।
১৯৯৯ সালে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিডিবিএফ নামের প্রতিষ্ঠানটি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। স্বপ্ন ছিলো বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে। কিন্তু সেই স্বপ্নকে এখন ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছেন অবৈধভাবে আকঁড়ে থাকা ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান ওরফে কালাম। যিনি জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। যার বাবা একজন স্বাধীনতা বিরোধী ভয়ংকর রাজাকার।যাবজ্জজীবন সাজাপ্রাপ্ত দেলোয়ার হোসনে সাঈদীর আত্মীয়ও।
সংস্থার প্রবিধানমালাকে উপক্ষো করে অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি পদে নিজেকে স্থায়ী করে নিয়েছেন এই কর্মকর্তা। মুক্তিযুদ্ধের সময় পিরোজপুরে গড়ে ওঠা শান্তি কমিটির এক সদস্যের ছেলে এই এমডি মাহাবুবুর রহমান। বহিরাগত সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে চলাফেরা করেন তিনি। গাড়িবিলাসী এমডির পরিবারের জন্য রয়েছে পৃথক পাঁচটি গাড়ি। এমডির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করছেন পিডিবিএফরেই অন্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা পরিচালক আ আ ম আনোয়ারুজ্জামান। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় গত ২৮ আগস্ট এসব অভিযোগ অনুসন্ধান করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি দ্রুতই এসব অনিয়মের ব্যাপারে তাদের প্রতিবেদন জমা দিবে বলে জানা গেছে।
অবশ্য ব্যবস্থাপনা পরচিালক মাহাবুবুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেনে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘নিয়োগ এবং পদোন্নতি যা হয়েছে সব নীতমিালা অনুসরণ করইে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা ঠিক বলছেন না। ’ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বাবার ভূমিকা সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘প্রতিপক্ষ মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার সুনাম ক্ষুণ্ন করতে চাচ্ছে ’। তিনি আরো বলনে, ‘আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়েছে সেই কমিটিই তদন্ত করে দেখুক আমার আদৌ কোনো অনিয়ম আছে কি না। ’ দারদ্র্যি বিমোচন র্কমসূচির টাকা লুটপাটের অভিযোগ সর্ম্পকে তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি আমার দুর্নীতি পাবে না। তারা রিপোর্ট দিলেই পরিস্কার হয়ে যাবে আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন।
তবে পিডিবিএফের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব প্রশান্ত কুমার রায় বলনে, ‘সম্প্রতি পিডিবিএফের র্বোড মিটিংয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (উন্নয়ন) প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের অভিযোগের সত্যতা পেলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’। তবে সর্বশেষ খবরে জানা গেছে ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন জমা পড়েনি। দ্রুতই কমিটি প্রতিবেদন জমা দিবে বলে জানা গেছে।
অবৈধভাবে পদে আছেন এমডি ক্ষৃব্ধ সমবায় সচিবঃ গ্রামের দরিদ্র মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে ১৯৯৯ সালের ১০ নভেম্বর একটি আইন প্রণয়ন করে পল্লী দারিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন (পিডিবিএফ) প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃত্বে রয়েছেন মোঃ মাহবুবুর রহমান এবং আ আ ম আনোয়ারুজ্জামান।অভিযোগ রয়েছে চাকরি জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন সরকারী প্রকল্পের টাকা লুটপাট ছাড়াও নিয়োগ ও ক্রয় বানিজ্যের অনৈতিকভাবে যুক্ত তারা। ২০০০ সালের ২৩মে দ্বিতীয় বোর্ড অব গভর্নস মিটিংয়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে তিন বছরের মেয়াদে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা এমডি নিয়োগের নীতিমালা পাশ করা হলেও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাভেক সচিব ড. মিহির কান্তি মজুমদার অবসরে যাওয়ার মাত্র একদিন আগে নিয়ম বহির্ভূতভাবে মাহাবুবুর রহমানকে প্রতিষ্ঠানের এমডি পদে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মাহবুবুর রহমানকে সংস্থাটির স্থায়ী এমডি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে যাওয়ার আগে ওই সচিবের কর্মকাণ্ড নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। যা নিয়ে এখনো ওই প্রতিষ্ঠানে আলোচনা আছে।
সম্প্রতি পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায় পিডিবিএফের প্রধান কার্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন করেন। শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহাবুবুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে সচিব প্রশান্ত কুমার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের আইনে এমডি পদে স্থায়ী নিয়োগের কোনো বিধান নেই। প্রবিধান মালা-৩ অনুযায়ী এক নম্বরে পরিচালকের পদ রয়েছে। কিন্তু আপনি অবৈধভাবে এমডি নিয়োগ নিয়েছেন, এটা বিধিবহির্ভূত নয়?’ সমবায় সচিবের এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এমডি মাহাবুবুর রহমান মাথা নিচু করে রাখেন। পিডিবিএফের একজন কর্মকর্তা এমন তথ্য জানিয়ে বলেন, ‘এমডি পদটি স্থায়ী করে নিয়ে ওই কর্মকর্তা সংস্থায় একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছেন। ’ কয়েকজন কৃষিবিদ ক্ষোভ প্রকাশ করে এমডি মাহাবুবুর রহমানকে ‘মামলাবাজ’ হিসেবেও অভিযুক্ত করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, বিভিন্ন কর্মকর্তাকে কোণঠাসা করতে তিনি একর পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করেছেন। কয়েকজন কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে সোলার প্যানেল থেকে শুরু করে প্রতিটি প্রকল্পেই দুর্নীতির অভিযোগ করেন।
শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের দুজন রাজাকারপুত্র : পিরোজপুর সদর পৌরসভার অফিস সহকারী মোস্তাক আহমেদ দুয়ারীর ছেলে মাহাবুবুর রহমান ওরফে কালাম দুয়ারী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মোস্তাক আহমেদ দুয়ারী ও তাঁর পরিবার শান্তি কমিটি গঠন করে। তিনি পাকিস্তানী সেনাদের বিভিন্ন সহযোগীদের সঙ্গে মিলে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নানা কার্যক্রমে পরিচালনা করেন। মাহাবুবুর রহামানের বাবাকে স্বাধীনতা বিরোধী ভয়ংকর রাজাকার হিসেবে চিহ্নিত করেন পিরোজপুর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নান্না পোদ্দার, বাংলাদেশে মুক্তযোদ্ধা সংসদের পিরোজপুর জেলা কমান্ডার গৌতম রায় চৌধুরী ও মুক্তি বাহিনীর ৯ নম্বর সেক্টরের সুন্দরবন সাবসেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ সহ অনেকেই। পিডিবিএফের পরিচালক আ আ আ ম আনোয়ারুজ্জামানের বাবা মোঃ আব্দুল হানিফ আহমেদ ওরফে হানিফ মাস্টারও শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলায় দারোগা আব্দুল কাদের হত্যা সহ নির্যাতন লুটপাট-ধর্ষণের মতো মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।বিক্ষুব্ধ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলেন,‘দুই রাজাকার পুত্র পিডিবিএফের শীর্ষ পদে থেকে রাজাকারদের মতোই কর্মকান্ড চালাচ্ছে।
পদোন্নতির নামে লুটপাটঃ ২০১৫ সালের ২১ অক্টোবর একটি জাতীয় পত্রিকায় পিডিবিএফের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয় থেকে ১৪১ জনের নিয়োগের ছাড়পত্র দেওয়ার কথা থাকলেও ওই পদে মাহাবুবুর রহমান ৭০০ জনের বেশী নিয়োগ দেন। অভিযোগ রয়েছে মন্ত্রণালয়ের কথা বলে নিয়োগ দেওয়ার সময় মাহাবুব সিন্ডিকেট জনপ্রতি পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা করে নিয়োগ বাণিজ্য করেছে।এ ছাড়া জনপ্রতি সাত লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই নিয়োগ ও পদোন্নতি বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান করেছেন। ইতিমধ্যে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দুই কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান ও আ আ ম আনোয়ারুজ্জামান জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট দুদুক কর্মকর্তারা জানান, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের জুলাই মাসে এই সংস্থাটির জেলা পর্যায়ে উপপরিচালক থাকা সত্বেও ১৩জন উপপরিচালককে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ ওই সব পদের বিপরীতে জেলা পর্যায়ে কোন পদ নেই।২০১৩ সালের ২১ জুলাই চারজন উপপরিচালককে এক বছর তিন মাসের মাথায় যুগ্ম পরিচালক পদে এবং ১৩০ জন সহকারী পরিচালককে সিনিয়র সহাকারী পরিচালক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয় এবং এ ছাড়া ২০১৩ সালের ১২ জানুয়ারি ৫৭ জন সিনিয়র সহকারী পরিচালক থেকে ২৬ জনকে উপপরিচালক পদে পদোন্নতি দেন এমডি মাহাবুবুর।এসব পদোন্নতির ক্ষেত্রে নীকতমালা ও গ্রেডেশন অনুসরণ করা হয়নি।
অডিট বন্ধ হলেও দুর্নীতি সচলঃ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক িএমডি মাহাবুবুর রহমান ক্ষমতার অপব্যবহার করে সংস্থার প্রধান কার্যালয়ের অডিট গত দুই বছর ধরে বন্ধ করে রেখেছেন। তবে চলতি বছরের জুনে তার গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের ধানীসাফায় পিডিবিএফের আঞ্চলিক কার্যালয়ে অডিট করা হলে ৬০ লাখ টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে। এ সময় জানা যায়, কাগজপত্রের তথ্য-উপাত্তের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নদী ভাঙ্গন এলাকায় অর্থ বা ঋণ বিতরণের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এসব অর্থ বা ঋণ আদৌ বিতরণ হয়নি। বেশির ভাগ টাকা মাহাবুবুর রহমান ও স্থানীয় বিভিন্ন কর্মকর্তার পকেট ভরেছে। একইভাবে বরিশালের উজিপুরের কার্যালয়ের অডিটে ৪৫ লাখ টাকার অনিয়ম ধরা পড়ে। এমডি মাহাবুব বিষয়টি ধামাচাপা দিতে চীফ অডিটের দেলোয়ার হোসেনকে যুগ্ম পরিচালক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
৩০০ র্কমীর ইনক্রিমেন্ট বন্ধ : এদিকে পিডিবিএফের ৩০০ র্কমীর ইনক্রিমেন্ট বন্ধ রাখা হয়েছে। এ বছরের ১ জুলাই থেকে সরকারি বাড়িভাড়াসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বন্ধ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে বার্ষিক মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হলেও এমডিরি নির্দেশে এদের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করা হয়েছে। জুন পরবর্তী সময়ের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিবিধি অনুসরণ করা হয়নি। প্রতিষ্ঠার প্রায় দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত সংস্থাটির নিজস্ব কোনো অর্গানোগ্রাম নেই।
নিউজ১৯৭১ডটকম.
Our facebook page