Latest News
কালিহাতীতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
মে ১৮, ২০২৪
গোবিন্দগঞ্জে ২১ কেজি গাঁজা জব্দ
মে ১৮, ২০২৪
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। দীর্ঘ সাহিত্যজীবনে তিনি তার মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস এবং নাটকসহ শিল্প-সাহিত্যের নানা অঙ্গনে।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিলে ২০১৬ সালের ১৫ এপ্রিল তাকে লন্ডন নিয়ে যাওয়া হয়। লন্ডনের হাসপাতালে তার ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। চার মাস চিকিৎসার পর তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
১৯৩৫ সালের ২৭শে ডিসেম্বর কুড়িগ্রামে সৈয়দ শামসুল হকের জন্ম। প্রয়াণের পরদিন ২৮ সেপ্টেম্বর তার মরদেহ কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের পাশে দাফন করা হয়।
কবিতা, উপন্যাস, নাটক, ছোটগল্প, চলচ্চিত্র, গান, অনুবাদসহ সাহিত্যে-সংস্কৃতির প্রায় সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সফল ও সাবলীল। আর এ জন্যই তিনি ‘সব্যসাচী’। তার লেখকজীবন প্রায় ৬২ বছরব্যাপী বিস্তৃত। বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজের আবেগ-অনুভূতি-বিকার সবই খুব সহজ কথা ও ছন্দে উঠে এসেছে তার লেখনীতে।
মাত্র ২৯ বছর বয়সে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেছিলেন। বাংলা একাডেমি পুরস্কার পাওয়া সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এ পুরস্কার লাভ করেন।এছাড়া বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন।
বৈচিত্রময় জীবনের অধিকারী সৈয়দ শামসুল হক স্কুলজীবন শেষ করেন কুড়িগ্রামে। এরপর ১৯৫১ সালে মুম্বাইতে গিয়ে কিছুদিন একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা সংস্থায় কাজ করেন। পরবর্তীতে জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে পড়ালেখা শেষ না করেই পুরোদমে লেখালেখি শুরু করেন। প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’।
সৈয়দ শামসুল হক কবি হিসেবেও পরবর্তী প্রজন্মের কবিদের জন্য পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭০ সালে প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা’ এক দীর্ঘ কবিতার সম্ভার। এই কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি তখন আদমজী পুরস্কার লাভ করেন। আরেক বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘পরানের গহীন ভিতর’ দিয়ে তিনি তাঁর কবিতায় আঞ্চলিক ভাষাকে উপস্থাপন করেছেন। সৈয়দ হক তাঁর কবিতা দিয়ে বারবার সাড়া ফেলেছেন।
সৈয়দ শামসুল হক তার কর্মজীবনের প্রায় সাত বছর কাটিয়েছেন লন্ডনে বিবিসি বাংলা বিভাগের সাথে। বিবিসি বাংলা থেকে সংবাদ পরিবেশন করেছেন ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে।
নাট্যকার হিসেবেও সৈয়দ শামসুল হক ছিলেন দারুণ সফল। বিশেষ করে তাঁর রচিত দুটি কাব্যনাট্য ‘নুরলদিনের সারাজীবন’ এবং ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ বাংলা নাটকে একটি বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে।
তিনি চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেছেন। তিনি ১৯৫৯ সালে মাটির পাহাড় চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লিখেন। এরপর তোমার আমার, শীত বিকেল, কাঁচ কাটা হীরে, পুরস্কার, ক খ গ ঘ ঙ, বড় ভাল লোক ছিল,সহ আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্রের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ লিখেন।‘ বড় ভাল লোক ছিল’ ও ‘পুরস্কার’ এ দুটি চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য লেখার পাশাপাশি তিনি চলচ্চিত্রের জন্য গানও রচনা করেছেন। এখানেও তিনি সফল হয়েছেন এবং পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।
কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি দুদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া কবির জন্মস্থান কুড়িগ্রামে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযথ মর্যাদায় দিনটি পালনের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আগামীকাল সন্ধ্যা সাতটায় সৈয়দ শামসুল হক স্বরণে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে এবং পরে সৈয়দ শামসুল হক রচিত নাটক ‘ পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ’ মঞ্চস্থ করবে। ২৯ তারিখে একাডেমির উদ্যোগে মঞ্চস্থ করবে নাটক ‘ হেমলেট ’। কুড়িগ্রামে কবির সমাধিতে কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে,কবির সমাধিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
কবির সহ-ধর্মিনী কথা শিল্পী আনোয়ারা সৈয়দ হক গতকাল জানান, সৈয়দ হকের ছোট ভাই মঙ্গলবার ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন। এ কারণে কবির স্মরণে পারিবারিকভাবে গ্রহণ করা সকল কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
Our facebook page