Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
আমি যখন স্কুলে ওপরের ক্লাসের ছাত্র, তখন আমাদের ইংলিশ টেক্সটবুকে একটি ভাষণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। ভাষণটি ছিল ব্রিটেনের দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালীন প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের। ভাষণটির শিরোনাম ছিল ‘অষড়হব রহ :যব নবধপয’, সমুদ্রসৈকতে একা। ভাষণটি ছিল অসম্ভব উদ্দীপনামূলক। অনেকে এই ভাষণকে লিঙ্কনের গেটিসবার্গ ভাষণের সঙ্গে তুলনা করেন।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে তখন হিটলারের ঝটিকা বাহিনী গোটা ফ্রান্স দখল করে নিয়েছে। ডানকার্কের যুদ্ধে ব্রিটিশ সৈন্যদের শোচনীয় পরাজয় ঘটেছে। হিটলারের মিত্র ইতালির মুসোলিনির চোখ আফ্রিকার দিকে। জাপানের যুদ্ধলিপ্সু প্রধানমন্ত্রী তোজো এশিয়ার ব্রিটিশ অধিকৃত উপনিবেশগুলোর দিকে তাকাচ্ছে। যুদ্ধে ব্রিটেন একা, সঙ্গে কেউ নেই। আমেরিকা তখনও নিরপেক্ষ। যুদ্ধে যোগ দেয়নি। জার্মান সেনাবাহিনী ইংলিশ চ্যানেলের ওপারে এসে জমায়েত হয়েছে। যে কোনো সময় লন্ডনের দিকে অগ্রসর হবে।
ব্রিটিশ সরকার তখন বিবেচনা করছে, রাজপরিবারকে লন্ডন থেকে ভারতের দিল্লিতে স্থানান্তর করা হবে কি-না! লন্ডন শহরের ওপর হিটলারের ভি-রকেটের অবিরাম হামলা চলছে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এই মহাদুর্দিনে প্রধানমন্ত্রী চার্চিল হাউস অব কমন্সে একদিন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন। এমন সময় বোমা হামলার সাইরেন বেজে উঠল। বোমা এসে পড়তে লাগল পার্লামেন্ট ভবনের ওপরেও। ভবনের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলো। কিন্তু চার্চিল বক্তৃতা থামালেন না। তার এই বক্তৃতাই ‘অ্যালোন ইন দ্য সি বিচ’ নামে খ্যাত। এই ভাষণের মূল কথা ছিল, ‘এই মুহূর্তে সমুদ্রসৈকতে আমরা একা হতে পারি। কিন্তু ব্রিটিশ জাতি এখন শত্রুর মোকাবেলায় বেশি ঐক্যবদ্ধ। আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। জয় আমাদের হবেই। ‘ঠরপঃড়ৎু রং ড়ঁৎং.’ চার্চিল যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন।
সেই কবে সুদূর কৈশোরে ভাষণটি পড়েছি। কিন্তু মনে এখনও গেঁথে আছে। বহুকাল পর ভাষণটির কথা মনে পড়ল বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা দেখে। চার্চিলকে সেদিন একা যুদ্ধ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল; এশিয়া-আফ্রিকা-ইউরোপের বিভিন্ন ফ্রন্টে। পরে অবশ্য আমেরিকা মিত্রশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগ দেয়। বাংলাদেশের দিকে তাকালেও দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক ফ্রন্টে একা চক্রান্ত বেষ্টিত অবস্থায় যুদ্ধ করে চলেছেন। তার দল আছে, সরকার আছে, প্রশাসন আছে (চার্চিলেরও ছিল); কিন্তু কোনো প্রকৃত মিত্র নেই। তিনি ‘চার্চিলিয়ান ভিগার’ নিয়ে সব ফ্রন্টে যুদ্ধ করছেন। আমি তাই তার বর্তমান অবস্থার নাম দিয়েছি ধষড়হব রহ :যব ংঃড়ৎসু ংবধ- উত্তাল সমুদ্রে একা।
শেখ হাসিনাকে আমি চার্চিলের সঙ্গে তুলনা করছি না। চার্চিল ছিলেন এক বিরাট সাম্রাজ্যের সাম্রাজ্যবাদী নেতা, অন্যদিকে শেখ হাসিনা একটি উন্নয়নশীল স্বাধীন দেশের গণতন্ত্রবাদী প্রধানমন্ত্রী। দু’জনের মধ্যে তুলনা চলে না। কিন্তু দু’জনের অবস্থার মধ্যে তুলনা চলে। চার্চিলের যুদ্ধ ছিল চারদিকে সামরিক ফ্রন্টে। আর হাসিনার যুদ্ধ চারদিকের রাজনৈতিক ফ্রন্টে। সামরিক ফ্রন্টে এ জয়ের জন্য যেমন দক্ষ জনবল এবং উন্নত সমরাস্ত্র প্রয়োজন; রাজনৈতিক ফ্রন্টেও তেমনি জয়ের জন্য দক্ষ এবং ঐক্যবদ্ধ জনবল এবং উন্নত কৌশল প্রয়োজন। চার্চিলের ছিল নিজস্ব সাহস, রণকৌশল এবং তার পেছনে ছিল শুধু ব্রিটেন নয়; হিটলার-অধিকৃত গোটা ইউরোপের নির্যাতিত ঐক্যবদ্ধ মানুষ। শেখ হাসিনারও আছে দুর্জয় মনোবল ও সাহস। রাজনৈতিক রণকৌশলও তার জানা। জনসমর্থনও তার আছে। কিন্তু ঐক্যবদ্ধ জনবল তার আছে কি?
হিসাব কষে দেখা যাক, রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে কতগুলো ফ্রন্টে তিনি যুদ্ধ করে চলেছেন। সংগঠনের দায়িত্ব যখন তিনি নেন, তখন আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত, অনৈক্যে জর্জরিত। ড. কামাল হোসেন যদি একদিকে যান, আবদুর রাজ্জাক যান অন্যদিকে। তিনবার তাকে নেতৃত্ব থেকে উৎখাতের চেষ্টা হয়েছে। একবার ১৯৮৬ সালে ড. কামাল হোসেনের বিদ্রোহের সময়; আরেকবার আবদুর রাজ্জাকের বাকশাল গঠন করে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময়। তৃতীয় দফা, এক-এগারোর আমলে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রবীণ নেতার সংস্কারবাদী হয়ে ‘মাইনাস টু’র চক্রান্তে শামিল হওয়ার বেলায়। তার জীবনের ওপরেও হামলা হয়েছে বহুবার।
শেখ হাসিনার প্রাণ রক্ষা পেয়েছে এবং নেতৃত্ব রক্ষা পেয়েছে দলের মধ্যম ও নিচের সারির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার পেছনে দাঁড়ানো এবং দেশের সাধারণ মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থনে। এরশাদের আমলে চট্টগ্রামে যখন পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে, তখন দলের নেতাকর্মীরা তাকে যেভাবে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলেন, তাতে হামলা ব্যর্থ হয়ে যায়। বিএনপির শাসনামলেও ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার সময় দেখা গেছে, অনবরত গ্রেনেড হামলার মুখে নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে দলের নেতাকর্মীরা এমনকি সাধারণ মানুষ শেখ হাসিনাকে ঘিরে দাঁড়িয়েছেন। হামলায় অসংখ্য নিরীহ মানুষ হতাহত হয়েছেন। এমনকি আইভি রহমানের মতো নেত্রী আত্মাহুতি দিয়েছেন, কিন্তু শেখ হাসিনা আহত হয়েও প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। সংগঠনের শক্তি, সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ শক্তি তাকে বারবার নিষ্ঠুর হামলা ও ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছে। সেই সঙ্গে তার দুর্জয় মনোবল ও সাহস তো ছিলই।
শুধু একটি-দুটি চক্রান্ত ও হামলা নয়, শেখ হাসিনাকে জীবনভর যুদ্ধ করতে হয়েছে প্রকাশ্য ও গোপন শত্রু এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিরুদ্ধে। তিনি এখনও দেশের প্রধানমন্ত্রী বটে, কিন্তু তাকে ১৯৪০ সালের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিলের মতো একা যুদ্ধ করতে হচ্ছে একাধিক ফ্রন্টে। প্রথম ফ্রন্ট তার নিজের দল। দলের ত্যাগী ও পুরনো নেতাকর্মীদের কনুইয়ের গুঁতোয় পেছনে ফেলে দিয়ে এই হাইব্রিড নব্যধনীর দল প্রভাব বিস্তার করে বসেছে দলে। এরা দলের ভেতরে-বাইরে মাফিয়াতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং এদের দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সর্বপ্রকার অনাচারের দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে আওয়ামী লীগকে। যেমন একশ্রেণির মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও আমলার কার্যকলাপে এত উন্নয়নমূলক কাজ করা সত্ত্বেও সরকার অকুণ্ঠ জনসমর্থন অর্জন করতে পারছে না।
গোটা আওয়ামী লীগ, তার মন্ত্রিসভা, প্রশাসন দাঁড়িয়ে আছে একটিমাত্র মানুষের জনসমর্থন ও জনপ্রিয়তাকে ভিত্তি করে। তিনি শেখ হাসিনা। ইতিহাসবিদ ড. মুনতাসীর মামুন ঠিকই লিখেছেন, ‘সব বিকল্পের বিকল্প আছে, শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নেই।’ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য এটি একটি কঠিন বাস্তবতা। সে জন্যই হাসিনাবিরোধী ডান ও বাম সব দলের আক্রোশ হাসিনার ওপর। বিএনপিরও দাবি, তাই নির্বাচনকালীন সরকার থেকে হাসিনাকে সরানো। তাদের দাবি দেখে মনে হয় দেশে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং তাদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথে একমাত্র বাধা হাসিনা।
শেখ হাসিনার জন্য যুদ্ধের প্রথম ফ্রন্ট হচ্ছে তার নিজের দল। এই দলকে সংশোধন, পুনর্গঠন এবং দল থেকে হাইব্রিডদের তাড়ানো কঠিন কাজ। এই যুদ্ধে জয়লাভ করতে পারলে তার অর্ধেক যুদ্ধ জয় হয়ে যাবে। তার জন্য দ্বিতীয় ফ্রন্ট হচ্ছে ‘৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধের এবং তার মূল চেতনার বিরোধী ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক জোট। এই জোটের নেতা বিএনপি শেখ হাসিনার গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার সামনে এরা টিকতে পারছে না। আগামী সাধারণ নির্বাচনে এদের একা লড়ার সাহস নেই। তাই এরা নতুন মিত্র খুঁজছে। অতীতে জামায়াত ও তথাকথিত ইসলামী টেররিস্ট গ্রুপের সঙ্গে মিলিত হয়ে দেশে ভয়াবহ সন্ত্রাস সৃষ্টি করে এরা তালেবানি কায়দায় ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিল। চার্চিলিয়ান ভিগার এবং ডিজিলেন্স দ্বারা শেখ হাসিনা তাদের সেই চেষ্টা ব্যর্থ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী এবং ‘৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও দণ্ডের ব্যবস্থা করে বিএনপিকে এই সরকার একেবারে মিত্রহীন করে ফেলেছে। তাই নতুন মিত্র খোঁজা।
এই নতুন মিত্ররা, যাদের মধ্যে ব্যর্থ এবং হতাশ প্রবীণ রাজনীতিকের সংখ্যা বেশি, তারা বহুদিন ধরেই তড়পাচ্ছিলেন, এবার শেখ হাসিনাকে একা ভেবে যুক্তফ্রন্ট নাম নিয়ে নতুন জোট বেঁধেছেন এবং সামনে এগিয়ে এসেছেন। এদের নিজেদের মধ্যে নীতি ও আদর্শের কোনো মিল নেই। ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিএনপির ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের তত্ত্বে বিশ্বাসী। সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদের ঘোর বিরোধী। আ স ম আবদুর রবের বিশ্বাস (এখনও আছে কি-না জানি না) বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে। ড. কামাল হোসেন মনে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর সেক্যুলার জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী। এখন তার সেই ইমান ঠিক আছে কি-না সন্দেহের বিষয়। যুক্তফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর এই তিন তন্ত্রে ঠোকাঠুকি লাগবে কি-না জানি না। তবে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ভিত্তিটা খুব কাঁচা। এটা হলো তাদের কমন হাসিনা-বিদ্বেষ। বিদ্বেষকে ভিত্তি করে কোনো সুষ্ঠু রাজনীতি হয় না।
তবু সবল হোক আর দুর্বল হোক এটা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তৃতীয় ফ্রন্ট। এদের রাজনৈতিক শক্তিকে নয়, চক্রান্তের শক্তিকে উপেক্ষা করা ঠিক হবে না। এখন জানা যায় এই যুক্তফ্রন্টের একজন প্রভাবশালী অদৃশ্য নেতা আছেন। তার ঘনিষ্ঠ মিতালি আছে মার্কিন এস্টাবলিশমেন্টের হিলারি সমর্থক অংশের সঙ্গে। তিনিই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট ও বিএনপি-জামায়াত জোটের মধ্যে কণ্ঠিবদলের ঘটকালিতে ব্যস্ত। তাছাড়া এই যে বিশ্বব্যাপী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পিআর এজেন্সি নিয়োগ করে শক্তিশালী অপপ্রচারের অভিযান এবং কয়েকজন নোবেল জয়ীকে বিভ্রান্ত করে তাদের কাছ থেকে একটি গ্রেফতার-কাণ্ডের প্রতিবাদপত্রে স্বাক্ষর সংগ্রহ; তাও এই স্বদেশি বিভীষণের কীর্তি।
এই যুক্তফ্রন্টের সহযোগী একটি বুদ্ধিজীবী অংশ আছে। যারা ‘সুশীল সমাজ’ নামে পরিচিত, তাদের হাতে আবার ‘নিরপেক্ষ’ পরিচয়ের শক্তিশালী মিডিয়া আছে। তারা সূক্ষ্ণভাবে হাসিনাবিরোধী প্রচারণা চালান এবং দেশি-বিদেশি প্রভাবশালী কূটনীতিক- বিশেষ করে মার্কিন ও ভারতের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। যেমন কিছুদিন আগে এই সুশীল সমাজের এক পাতি-নেতার বাড়িতে বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটকে হাসিনাবিরোধী কয়েকজন হতাশ রাজনীতিকের সঙ্গে মধ্যরাতের ভোজসভায় মিলিত হতে দেখা গেছে। অন্যদিকে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাকরঞ্জন চক্রবর্তীকে দেখা গেছে দীর্ঘ প্রবন্ধ লিখে তাতে হাসিনা সরকার আগামী সাধারণ নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয় বরণ করবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করতে।
এখন জানা যাচ্ছে, এটা বর্তমান ভারত সরকারের (অতীতের সরকারের তো নয়ই) অভিমত নয়। তাহলে কাদের অভিমত? অনেকের সঙ্গে আমারও ধারণা, পিনাক বাবু ঢাকায় থাকাকালে ঢাকার সুশীল সমাজ ও ‘নিরপেক্ষ’ মিডিয়ার যাদের সঙ্গে নিত্য ওঠাবসা করেন, তাদের অভিমত দ্বারাই প্রভাবিত হয়েছেন এবং তাদের সাহায্য করার জন্যই একটি এশিয়ান ম্যাগাজিনে প্রবন্ধটি লিখেছেন। এই সুশীল সমাজ ও তাদের মিডিয়া দুটিকে বলা চলে হাসিনাবিরোধী চতুর্থ ফ্রন্ট। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময়েও এরা তখনকার রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানকে প্রভাবিত করে এবং বিদেশি কিছু কূটনীতিকের সহায়তায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোঁট পাকিয়েছেন এবং বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় বসতে সাহায্য জুগিয়েছেন। এবারও তারা একই চক্রান্তে লিপ্ত। তবে প্রতি ডুবেই শালুক উঠবে- সে সম্ভাবনা আছে কি?
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই চারটি ফ্রন্ট ছাড়া আরও দু’একটি ফ্রন্ট আছে। স্থানাভাবে তাদের নিয়ে আলোচনা করা গেল না। এরা ছোট এবং দুর্বল হলেও মনে রাখতে হবে, ছোট পিঁপড়েরও কামড় দেওয়ার ক্ষমতা আছে। এই একাধিক শত্রু ফ্রন্ট দ্বারা শেখ হাসিনা এখন বেষ্টিত। তিনি একা যুদ্ধ করছেন। দেশের যে বাম গণতান্ত্রিক শক্তি তার প্রকৃত মিত্র, তারা দুর্বল এবং বিভক্ত। আওয়ামী লীগের এককালের মিত্র কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ (সিপিবি) আরও একটি বা দুটি ছোট দলের সঙ্গে জোট বেঁধে হাসিনা সরকারের বিরোধিতার নামে কমিউনিস্টদের সহজাত ‘বৈজ্ঞানিক ভুল’ আবার করতে চলেছেন।
এ ক্ষেত্রেও শেখ হাসিনা সাহস হারিয়েছেন, মনে হয় না। তিনি চার্চিলের মতো দুর্জয় সাহস নিয়ে যুদ্ধরত। তিনি জানেন, তার শক্তির প্রকৃত উৎস জনগণ এবং তার সংগঠন। তার হাতে সময় নেই। বিএনপি যতই রঙ-তামাসা করুক, নির্বাচনে আসবে। যারা মুখে জামায়াতকে অস্পৃশ্য বলে ঘৃণার ভাব দেখাচ্ছেন, তারা জামায়াতের মিত্র ও সহযোগী বিএনপির সঙ্গে হাত মেলাবেন। তারা নির্বাচনে জিতবেন- এই অলীক আশায় বুক বেঁধে ‘কালনেমির লঙ্কা ভাগে’ বসবেন। পরিণাম হয়তো রাম-রাবণের যুদ্ধের।
তবু শেখ হাসিনাকে তার চার্চিলিয়ান ভিগারের সঙ্গে রণকৌশল মেশাতে হবে। নিজের সংগঠনকে হাইব্রিডমুক্ত করে জনগণের কাছাকাছি আবার নিয়ে যেতে হবে। তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাকে দলের জনপ্রিয়তায় পরিণত করতে হবে। বিদেশি কূটনীতিকদের সুশীল সমাজের খপ্পর থেকে মুক্ত করতে হবে। দেশে এবং বিদেশে বিরোধীদের প্রপাগান্ডা অভিযান ব্যর্থ করার জন্য দলের এবং সরকারের কাউন্টার প্রপাগান্ডা-মেশিন জোরদার করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের ভোটদাতাদের সামনে সোনার বাংলা ও ডিজিটাল বাংলার মতো নতুন কোনো ভবিষ্যতের ছবি তুলে ধরতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, আওয়ামী লীগ যে গণতন্ত্রে ও সেক্যুলারিজমে বিশ্বাসী- এই সত্যটা তরুণ প্রজন্মের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে। পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে আমেরিকা ও ভারতের সঙ্গে বিরোধীরা যাতে অবিশ্বাস ও সন্দেহ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
সময় কম, কাজ অনেক বেশি। শেখ হাসিনা চাবুক মেরে তার সংগঠনটিকে সজাগ ও সতর্ক করুন। জনগণ যাদের পছন্দ করে না, তাদের দল ও সরকার থেকে বহিস্কার করুন। তাদের কার্যকলাপের জন্য তারা যেন শাস্তি পায়। মনোনয়ন-বাণিজ্য এবং দলের ভেতরে সিন্ডিকেটের অশুভ প্রভাব দূর করুন। এখনও জনগণের আস্থা আওয়ামী লীগের ওপর কিছুটা হলেও আছে। শেখ হাসিনার ওপর এই আস্থা ও সমর্থন বিশাল। আমার বিশ্বাস, তার সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা যদি আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে জনগণের সামনে গিয়ে দাঁড়ান, তাহলে যে বিরোধী গোষ্ঠী, দল-উপদল এখন যুক্ত হয়ে মত্তমাতঙ্গের মতো হাঁকডাক করছে; সব ফ্রন্টেই তাদের ব্যর্থতা ও পরাজয় হবে অনিবার্য।
লন্ডন, ১৪ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার, ২০১৮ । সূত্র: সমকাল।
Our facebook page