Latest News
গাজীপুরের বেশিরভাগ রাস্তাই যেন মরণ ফাঁদ
মে ২০, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের এবারের আসর। আগামী ১৪ জুন মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে পর্দা উঠবে দুনিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় এ ক্রীড়া উৎসবের। তবে এ নিয়ে এরইমধ্যে উন্মাদনা শুরু হয়েছে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে। আর ক্রীড়ামোদীদের এমন বিশ্বকাপ জ্বরে নির্ঘুম রাত কাটছে পতাকা তৈরিতে ব্যস্ত বাংলাদেশি দর্জিদের। নিজ দেশের নয়; লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা আর নেইমারের ব্রাজিলের বিজয় কেতন উড্ডয়নের প্রতি আগ্রহ ক্রেতাদের। ফলে মূলত এই দুই দেশের পতাকাই তৈরি করছেন কারিগররা।
ঢাকার মেরাজনগরে কয়েকটি ছোট কারখানা রয়েছে হোসেনের। এসব ওয়ার্কশপে আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তৈরি হচ্ছে ছোট-বড় নানা আকৃতির পতাকা।
৪০ বছরের হোসেন বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে আমি টানা কাজ করে যাচ্ছি। এমনও গেছে যেদিন আমি দুই ঘণ্টাও ঘুমাতে পারিনি।’ কোনোমতে নিজের প্রিন্টিং মেশিন থেকে দৃষ্টি সরানোর সুযোগ পান হোসেন।
হোসেনের প্রত্যাশা ১৪ জুন বিশ্বকাপ শুরুর আগেই কয়েক লাখ পতাকা তৈরিতে সক্ষম হবে তার প্রতিষ্ঠান।
ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশ হচ্ছে ক্রিকেটের দেশ। তবে প্রতি চার বছর পর বিশ্বকাপ জ্বরে ফুটবল উন্মাদনায় মাতে এই দেশের মানুষ। অথচ ফিফা র্যাংকিংয়ে ২০২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১৯৭ তম।
বিশ্বকাপ মৌসুমে দেশের পথেঘাটে সর্বত্র দেখা মিলে ব্রাজিল ও আর্জেন্টাইন পতাকার। কোথাও যেন পুরো সড়কই চলে যায় এই দুই দেশের পতাকার দখলে। এমনকি ঘরবাড়িও এর বাইরে নয়। বাড়ির ছাদ এমনকি কোনও কোনও ক্ষেত্রে পছন্দের দলের পতাকার রঙ শোভা পায় বাড়ির দেয়ালে। বাজারে বাড়তি চাহিদার কারণে বহু ঘরবাড়ি পরিণত হয় পতাকা তৈরির অস্থায়ী ওয়ার্কশপে।
হোসেন বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার পতাকা তৈরি করছি। আজ আমরা ইতোমধ্যে আর্জেন্টিনার ১১ হাজার পতাকা বানিয়েছি।’
পছন্দের দলের প্রতি সম্মান জানাতে ওই দলের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশে মিছিলের প্রবণতা রয়েছে। গত সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এতে দেখা যায়, মাদারগঞ্জ এলাকায় ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের আর্জেন্টাইন পতাকা নিয়ে মিছিল করছে সমর্থকরা।
১৯৮২ সালে প্রথম বিশ্বকাপ ফুটবলের সরাসরি সম্প্রচার দেখতে পায় এই দেশের মানুষ। কিন্তু ১৯৮৬ সালে যখন দিয়াগো ম্যারাডোনার কল্যাণে ট্রফি জেতে আর্জেন্টিনা তখন অনেকের হৃদয়ে ঠাঁই করে নেয় দলটি।
ফারুক মিয়া একজন পতাকার হকার। পতাকা মজুত করতে নারায়ণগঞ্জ থেকে এসেছিলেন তিনি। তার ভাষায়, ‘আর্জেন্টিনার জন্য উন্মাদনা এখনও শক্তিশালী হচ্ছে। ম্যারাডোনা চলে গেছেন কিন্তু মেসি এখন নতুন সুপারস্টার।
গত সপ্তাহে ৫০০টি পতাকা কেনেন ফারুক মিয়া। এতে ব্যাপক লাভবান হওয়ার পর এখন তার আরও ৫০০টি দরকার। ফারুক নিজেও আর্জেন্টিনার একনিষ্ঠ সমর্থক।
বিশ্বকাপ উপলক্ষে কয়েক লাখ পতাকা বিক্রির আশা করছেন কারখানা মালিক সেলিম হাওলাদার। ৩৩ বছরের এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘২০১৪ সালে আমি ৮০ হাজারের বেশি পতাকা বিক্রি করেছি। এর অধিকাংশই বিক্রি হয়েছে বিশ্বকাপ চলাকালে বা এর কয়েকদিন আগে থেকে। এখন আমি দিনে দুই থেকে আড়াই হাজার বড় পতাকা এবং ১০ হাজার ছোট আকারের পতাকা বিক্রি করছি; যদিও টুর্নামেন্ট শুরুর এখনও কয়েক সপ্তাহ বাকি আছে।’
নিজের কারখানায় ২৫ জন কারিগর নিয়োগ দিয়েছেন সেলিম হাওলাদার। মেরাজনগরের কারখানাগুলোতে কাজ করছেন এমন প্রায় দুই হাজার কারিগর।
ব্যবসায়ী সেলিম হাওলাদারের অর্ডার লিস্টের বড় অংশজুড়ে রয়েছে মেসি ও নেইমার ভক্তদের অর্ডার। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হচ্ছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। আমি এমনকি ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের আর্জেন্টাইন পতাকার অর্ডার পেয়েছি। দেশে এই দুই দলের বিপুল সংখ্যক সমর্থক রয়েছে। অন্য জনপ্রিয় দলগুলোর মধ্যে রয়েছে জার্মানি, স্পেন ও পর্তুগাল।’
বাংলাদেশের সাড়ে চার হাজার পোশাক কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। এসব প্রতিষ্ঠান দুনিয়াজুড়ে শীর্ষস্থানীয় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে কোটি কোটি ডলারের পোশাক সরবরাহ করে। তবে পোশাক শ্রমিকদের অবস্থার উন্নয়নের অগ্রসর হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা। তারা বলছেন, এখানে শ্রমিকদের প্রায়ই দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, বিপজ্জনক কর্মপরিবেশ এবং খুবই কম বেতনে কাজ করার মতো অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।
নার্গিস আক্তারের মতো দরিদ্র শ্রমিকদের জন্য অবশ্য বিশ্বকাপ মৌসুমে পতাকার উন্মাদনা সুখবর এনে দেয়। কেননা, এ থেকে তাদের কিছুটা বাড়তি আয়ের ব্যবস্থা হয়। ২৮ বছরের নার্গিসের স্বামী মোহাম্মদ ইকবাল হাওলাদারের কারখানায় কাজ করেন।
ইকবাল বলেন, ‘দিনে আমরা গড়ে তিন হাজার টাকা করে পাই।’ গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে পুরো মাসের বেতন দাঁড়ায় গড়ে ছয় হাজার টাকা। এ ধরনের কাজের জন্য অন্যান্য দেশের তুলনায় এ বেতন সর্বনিম্ন।
নার্গিস আক্তার হাসিমুখে বলেন, আমি চাই পতাকার জন্য এই উন্মাদনা আরও বহু মাস ধরে চলতে থাকুক।
সূত্র: নিউ ভিশন
Our facebook page