Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ‘কৌশলগত সম্পর্ক’ রাখতে চায় আওয়ামী লীগ সরকার। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন মাথায় রেখেই এ সম্পর্ক বলে জানিয়েছেন দলটি নীতিনির্ধারকগণ। এ জন্যই হেফাজতের দাবিগুলো পূরণে সরকার উদ্যোগী হয়েছে বলে জানান তারা। অবশ্য আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, হেফাজতে ইসলাম ও ধর্মীয় গোষ্ঠী নিয়ে সরকারের এই অবস্থান সাময়িক।
অবশ্য সরকারের এই কৌশলগত অবস্থানকে ক্ষতিকর মনে করছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের বেশির ভাগ শরিক। তারা মনে করে, ধর্মীয় এই গোষ্ঠীর ভোট কখনোই আওয়ামী লীগের বাক্সে যাবে না। তাই হেফাজতে ইসলামের দাবি মেনে নিয়ে আওয়ামী লীগের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ করার দরকার ছিল না।
১৪ দলের শরিক দলের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, সরকার হেফাজতকেন্দ্রিক কৌশল প্রণয়নে রাজনৈতিক বিচার-বিশ্লেষণের চেয়ে প্রশাসনিক পরামর্শকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। সরকারের যেসব সংস্থা হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে, সরকারি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের মতামতই বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
তবে ১৪ দলের শরিক তরীকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি বলেন, সরকার যদি কোনো কৌশল থেকে হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায়, সেটা ঠিক হবে না। এর মাধ্যমে ১৪ দল বা সরকার কোনো অর্জন করতে পারবে না। আর কওমির স্বীকৃতি শর্ত সাপেক্ষে দেওয়া উচিত ছিল।
হেফাজতে ইসলামের দাবির মুখে পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এরপর সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্য সরানোর বিষয়ে আন্দোলন শুরু করে হেফাজত। গত মঙ্গলবার হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফীর উপস্থিতিতে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটা (ভাস্কর্য) এখানে থাকা উচিত নয়।’ ওই অনুষ্ঠানেই কওমি মাদ্রাসার সনদের সর্বোচ্চ স্তরের স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে ২০০৬ সালে নির্বাচনের আগে আগে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে পাঁচ দফা চুক্তি করেছিল আওয়ামী লীগ।
গত দুদিনে আওয়ামী লীগের আটজন কেন্দ্রীয় নেতা এবং ১৪ দলের শরিক চারটি দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে প্রথম আলোর কথা হয়। শরিক দলের নেতারা মনে করছেন, সরকারের কৌশলের কারণে উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠী আশকারা পাবে।
আর আওয়ামী লীগের নেতাদের বেশির ভাগই মনে করেন, কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি ঠিকই আছে। তবে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়া উচিত। এসব নেতা বলেন, পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। ভাস্কর্য সরানোটা ঠিক হবে না।
হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সরকার সমঝোতা করে চলছে কি না, গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্ন করা হয়। জবাবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের রাজনীতির বাস্তবতা হচ্ছে, জনগণের অনুভূতি ও আবেগের সঙ্গে সংগতি রেখে যারা বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তারাই এ দেশের সত্যিকারের প্রগতিশীল। বাস্তবতা থেকে প্রগতি বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। আমরা তো হেফাজতের আদর্শের সঙ্গে কোনো সমঝোতা করিনি।’
কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখানে হেফাজত মূল বিষয় নয়, আমাদের মূল বিষয় কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি। এখানে হেফাজতের সঙ্গে আমাদের কোনো জোট হয়নি। তাদের (হেফাজত) চিন্তাধারার সঙ্গে আমাদের চিন্তাধারার একটা মিলমিশ হয়ে গেছে, এমন ধারণা কোথা থেকে এল? আমরা বাংলাদেশের ৭০ হাজার কওমি মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের তো অবজ্ঞা করতে পারি না।’
কেবল কওমি মাদ্রাসার সনদ নয়, এবারের বাংলা নববর্ষে দলের শোভাযাত্রা কর্মসূচি বাতিল করার বিষয়টিও আওয়ামী লীগের অনেকে ভালোভাবে নেননি। কয়েক বছর ধরেই ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এই শোভাযাত্রা করে আসছিল।
মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে হেফাজতের অবস্থানের সঙ্গে আওয়ামী লীগের এই অবস্থানের কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা নিয়েও দলের মধ্যে আলোচনা আছে। অবশ্য ওবায়দুল কাদের গতকালের সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জনগণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে এই কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে।
Our facebook page