Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে পাশের দেশ মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কম করে হলেও ১২ লাখ ছিন্নমূল রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তাদের অপরাধ তারা প্রধানত মুসলমান, যারা মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে বাস করে। প্রচলিত পরিচয়ে তারা রোহিঙ্গা মুসলমান এবং মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে তাদের বসবাস কম করে হলেও ৪০০ বছর ধরে। ঐতিহাসিকদের মতে, তাদের পূর্ব পুরুষরা সুদূর আরবস্থান থেকে এসে আরাকান প্রদেশে বসবাস শুরু করে এবং একসময় আরাকানে তারা এক সমৃদ্ধিশালী রাজ্য গড়ে তোলে। সেই রাজ্যের বিস্তৃতি সুদূর চট্টগ্রাম পর্যন্ত ছিল। দীর্ঘদিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও তত্সংলগ্ন অঞ্চল আরাকান রাজ্যের অংশ ছিল। মিয়ানমারের রাজা অনেকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও আরাকান রাজ্য দখল করতে ব্যর্থ হন এবং কখনো দখল করতে সক্ষম হলেও তা তাঁদের দখলে রাখতে ব্যর্থ হন। রাজ্য পুনরুদ্ধারে বাংলার সুলতানরা সব সময় আরাকানের রাজপরিবারকে সহায়তা করে। একসময় চতুর ইংরেজরা আরাকান দখল করে নেয় এবং তা তাদের ভারত সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়। ইতিহাসের নিরিখে বলা যায়, আরাকান কখনো মিয়ানমারের অংশ ছিল না। ১৯৪৮ সালে যখন ইংরেজরা মিয়ানমারকে (তখন বার্মা) স্বাধীনতা দেয় তখন অনেকটা অযাচিতভাবে তারা আরাকানকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত করে দেয়। আসলে বিশ্বে বর্তমানে যত হানাহানি তার মূলে প্রধানত ঔপনিবেশিক শাসক তথা ইউরোপীয়রাই দায়ী। শুরুর দিকে আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমান অধিবাসী আর মিয়ানমারের বৌদ্ধ অধিবাসীদের বসবাস ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্য ও শান্তিপূর্ণ। বিপত্তি শুরু হয় ১৯৬২ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করার পর থেকে। তারা ঘোষণা করে ‘বার্মা হবে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী থেরাবাদা বার্মিজ বৌদ্ধদের জন্য। এখানে অন্য কোনো ধর্মের বা মতের মানুষ বসবাস করতে পারবে না।’ থেরাবাদা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সাধারণত বিশ্বাসে মৌলবাদী হয়। তাদের বিপরীতে যারা আছে তারা হচ্ছে মহায়না বৌদ্ধ। এদের মানবিক গুণাবলি অনেক বেশি উদার হয়ে থাকে। সেনাতন্ত্র কায়েম হওয়ার পর থেকেই মিয়ানমারে শুদ্ধি অভিযানের নামে অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎখাত শুরু হয়। অনেক অঞ্চলে বাদ যায় না মহায়না বৌদ্ধরাও। গত ৫০ বছরে মিয়ানমার থেকে শুধু মুসলমানরাই বিতাড়িত হয়েছে তা নয়, অনেক অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হয়েছে খ্রিস্টান, হিন্দু ধর্মাবলম্বী ও মহায়না বৌদ্ধরাও। এর ফলে মিয়ানমারে জন্ম হয়েছে অন্তত অর্ধ ডজন সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং মিয়ানমারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনো তাদের দখলে। এখন পর্যন্ত কিছুটা ব্যতিক্রম মুসলমানরা। ‘আরসা’ নামের একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছিল ঠিক, কিন্তু কারো কোনো পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় তারা তেমন একটা সুবিধা করতে পারেনি। এর ফলে মিয়ানমার তথা আরাকান থেকে মুসলমান রোহিঙ্গাদের উৎখাত করতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অনেক সহজ হয়েছে।
আরাকান থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রথম মুসলমান রোহিঙ্গা উৎখাত শুরু হয় ১৯৬২ সাল থেকে। উৎখাতের আগে এই নিরস্ত্র রোহিঙ্গারা শিকার হয় ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আর লুটপাটের। তাতে সেনাবাহিনী ছাড়াও অংশগ্রহণ করে থেরাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু ও তাদের অনুসারীরা। দীর্ঘ সময় ধরে তা নিরবচ্ছিন্নভাবে চলে। কখনো তা ধীরগতিতে আবার কখনো তা হয়ে ওঠে জনস্রোত। বলা বাহুল্য, এই রোহিঙ্গাদের মূল গন্তব্য বাংলাদেশ। কিছু মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড অথবা ভারতে প্রবেশ করেছে, তবে তাদের সংখ্যা কয়েক হাজার। অন্যদিকে বাংলাদেশে গত এক বছরে প্রবেশ করেছে সাত লাখের ওপর। সারা বিশ্বে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এই নৃশংসতা এখন বহুল প্রচারিত। বর্তমানে বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা কোনো অবস্থায়ই ১২ লাখের কম নয়। এদের প্রায় সবার ঠাঁই হয়েছে কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ আর কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে। ধারণা করা হয়েছিল, ৫০ বছর পর ২০১৫ সালে মিয়ানমারে একটি সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। কারণ এটা অবধারিত ছিল শান্তিতে নোবেল বিজয়ী স্বাধীন বার্মার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা অং সানের কন্যা অং সান সু চি যিনি সেনাবাহিনীর হাতে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি ছিলেন, তাঁর দল এনএলডি বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করবে। অং সান সু চি সম্পর্কে বিশ্বে একটি ধারণা ছিল একবার তিনি মুক্ত হয়ে যদি সরকার গঠন করতে পারেন, তাহলে বদলে যেতে পারে মিয়ানমারের ৫০ বছরের সেনাবাহিনীর নিবর্তনমূলক সামগ্রিক চিত্র। বিশ্বের মানুষের বিশ্বাস ছিল অং সান সু চি গণতন্ত্রের একজন পূজারি। তবে মিয়ানমারের ধূর্ত সেনাবাহিনী নির্বাচনের পরে নতুন সরকারে যাতে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নিরঙ্কুশ থাকে তার জন্য নির্বাচনের আগে তারা নিজেই একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে এবং সংসদে ২৫ শতাংশ আসন তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।
একসময় সু চি মুক্ত হন। ২০১৫ সালে তাঁর দল নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয় লাভ করে। কিন্তু মানুষ বুঝতে পারে গণতন্ত্রের পথে সু চির হাঁটতে বিন্দুমাত্র কোনো ইচ্ছা নেই। তিনি যেকোনো প্রকারে ক্ষমতায় যেতে চান এবং সরকারের একটি শীর্ষ পদ চান। তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না তা আগেই জানতেন। কারণ সেনাবাহিনী সংবিধানে এমন ধারা অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে যে কারো স্বামী বা স্ত্রী যদি বিদেশি হন, তাহলে তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চির স্বামী ছিলেন ব্রিটিশ। নতুন সরকারে তাঁর পদমর্যাদা হয় প্রধানমন্ত্রীর। একসময় সু চির মুক্তি চেয়ে সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলন হয়। বাংলাদেশ থেকে এক লাখ মানুষের স্বাক্ষরসংবলিত একটি পিটিশন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে জাতিসংঘে প্রেরণ করা হয়। স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে যেহেতু আমি নিজে অংশগ্রহণ করেছিলাম, সেহেতু সু চির মুক্তিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের মতো আমরাও বেশ আনন্দিত হয়েছিলাম। সেই সু চির সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ হলো ২০১৪ সালের মে মাসে ইয়াঙ্গুনে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে। সঙ্গে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত আর প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক সোহরাব হাসান। সু চি মিলিত হলেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। কারো কারো প্রশ্নের উত্তর দিলেন। কিন্তু আমরা বাঙালির কোনো প্রশ্নই তিনি নিলেন না। বুঝতে পেরেছেন আমরা রোহিঙ্গা নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করতে পারি। তত দিন সীমিত আকারে আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা বিতাড়ন শুরু হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের নিয়ে যে হিমশিম খাচ্ছে তা একবিংশ শতকের এক বিরাট মানবিক বিপর্যয়। প্রথম দিকে বিশ্বসম্প্রদায় তো এই বিপর্যয়কে স্বীকৃতিই দিতে চায়নি। মিয়ানমার সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকার বলেছে, এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী এবং তারা তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। শুরুর দিকে এই ভাগ্যবিড়ম্বিত আদম সন্তানদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্থানীয় জনগণ ও সরকার। শেখ হাসিনা দৃঢ় কণ্ঠে বলেছেন, মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশ সাময়িকভাবে আশ্রয় দিচ্ছে ঠিক, তবে তাদের দ্রুততম সময়ে নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। কিন্তু যতই সময় গেছে ততই আরাকান রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী জনস্রোত বেড়েছে। উজাড় হয়েছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, পাহাড় আর জলাভূমি। বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে ঘাঁটি গেড়েছে বিভিন্ন অপরাধীচক্র। রোহিঙ্গা আশ্রয় গ্রহণকারীদের দেখতে এসেছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান। এসেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আর আন্তর্জাতিক রেডক্রসের কর্ণধাররা। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। কারণ সব সময় মিয়ানমারের পাশে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া আর চীন। সঙ্গে ছিল ভারত। এর প্রধান কারণ আরাকান রাজ্যে তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ। সেখানে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, যেখানে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া আর ভারতের বিরাট বিনিয়োগ। চীনা সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে বিশাল সমুদ্রবন্দর। হিটলার তাঁর দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার জন্য ইহুদিদের দায়ী করে সেই দেশে ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করেছিলেন। বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক স্বার্থের চেয়ে বড় আর কোনো স্বার্থ তেমন একটা গুরুত্ব পায় না।
রোহিঙ্গা সমস্যা প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক মহলের তেমন একটা দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেনি। তা শুধু কিছু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের শিরোনাম হতে পেরেছে। এই কারণে হলেও সু চি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানকে দিয়ে রোহিঙ্গা বিষয়টি সম্পর্কে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিশন গঠন করেন। সব সদস্যই সু চির বাছাই করা। তাঁরা আরাকান রাজ্য সরেজমিনে সফর করে বলেন, এই রাজ্যের সমস্যা সমাধান করতে হলে প্রথমে রাজ্য থেকে উৎখাত হওয়া সবাইকে মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দিতে হবে এবং তাদের পুনর্বাসনের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বমোট তাঁরা পাঁচটি সুপারিশ উল্লেখপূর্বক বলেন, কমিশনের সুপারিশের মধ্যেই বলা আছে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের মূল চাবিকাঠি। বলা বাহুল্য, অং সান সু চি তাঁর গঠিত কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে অনীহা প্রকাশ করেন। কারণ সুপারিশগুলো তাঁর দেশের সেনাবাহিনী অনুমোদন করেনি। সু চি যেকোনো বিচারেই তাঁর দেশের সেনাবাহিনীর হাতে জিম্মি। এ ঘটনার পরপরই আরাকান থেকে রোহিঙ্গা উৎখাত বিষয়টি গণহত্যার রূপ নেয়। সমস্যাটিকে প্রথমে প্রকৃত অর্থে আন্তর্জাতিক ফোরামে নিয়ে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যখন গত বছর তিনি জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা উত্থাপন করেন এবং নিজে কফি আনানের সুপারিশের আলোকে পাঁচ দফা সুপারিশ পেশ করেন। বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদ পর্যন্ত গড়ায় কিন্তু সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে। গত এক বছরে বাংলাদেশ বিষয়টি ওআইসি, জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা, কমনওয়েলথ সম্মেলন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ব্রিটিশ পার্লামেন্টসহ অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। আসিয়ান দেশগুলোরও সমর্থন লাভ করেছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া তা অনেক বিস্তৃতভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে। জাতিসংঘ কর্তৃক গঠিত একটি তথ্যানুসন্ধানী দল গত মাসে বলেছে, তাদের অনুসন্ধানে এই সত্য উঠে এসেছে যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে। জাতিসংঘের সামনের অধিবেশনে এই বিষয়টি গুরুত্ব পাবে বলে সাধারণের ধারণা।
বাংলাদেশের গত এক বছরের নীরব কূটনৈতিক তৎপরতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হচ্ছে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরাকান রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ, সীমান্ত অতিক্রমে বাধ্য করা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও বিচার করতে পারবে আইসিসি। সিদ্ধান্তে আরো বলা হয়েছে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রসিকিউটরদের এই মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শেষ করতে হবে। তবে মিয়ানমার জানিয়েছে, এ ব্যাপারে আইসিসির তদন্ত করার কোনো এখতিয়ার নেই। কারণ মিয়ানমার আইসিসির সদস্য নয়। আইসিসি রোম সনদের (Rome Statute) ক্ষমতা বলে ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করে। এই আদালত নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে বসে এবং যেকোনো দেশ বা সংস্থা এই আদালতের সদস্য হতে পারে। বাংলাদেশ সদস্য হলেও যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ভারত, পাকিস্তান বা মিয়ানমার—কোনো দেশই এই সংস্থার সদস্য নয়। যদিও মিয়ানমার আইসিসির এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আইসিসির আইনে বলা আছে একটি অসদস্য রাষ্ট্রের মানবতাবিরোধী কার্যকলাপের কারণে অন্য আরেকটি সদস্য রাষ্ট্র যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে অপরাধী রাষ্ট্রের বিচার করার এখতিয়ার আইসিসির আছে। এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশের নীরব কূটনীতি কত দ্রুত অভিযুক্ত মিয়ানমারকে তাদের চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে। একটি বাস্তব সত্য সবাইকে মনে রাখতে হবে, যতই বাংলাদেশ বা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলুক এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ মানবতার খাতিরে আশ্রয় দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে মিয়ানমারের এই ভয়াবহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড খুব দ্রুত মিয়ানমারসহ এই অঞ্চলের সব দেশকে নিরাপত্তার মতো একটি জটিল সমস্যার মুখোমুখি করে তুলবে। সময় থাকতে বাস্তবতা উপলব্ধি করা সব মহলের জন্য মঙ্গল।
লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক। সূত্র: কালের কন্ঠ।
Our facebook page