Latest News
কালিহাতীতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
মে ১৮, ২০২৪
গোবিন্দগঞ্জে ২১ কেজি গাঁজা জব্দ
মে ১৮, ২০২৪
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা-নির্যাতন ক্রমাগতভাবে বাড়তে থাকার মুখে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে জরুরি খাদ্য সহবরাহ কর্মসূচি স্থগিত করে দিয়েছে জাতিসংঘ। ২০১২ সাল থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহযোগিতা দিয়ে আসছিল জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। এতে আড়াই লাখ মানুষের খাদ্যের সংস্থান হতো। কিন্তু এ কর্মসূচি স্থগিত করায় তাদের খাদ্য নিরাপত্তায় চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হলো।
গতকাল শনিবার ডব্লিউএফপির এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় অভ্যন্তরীণভাবে গৃহহীন দুই লাখ ৫০ হাজার এবং অন্যান্য অতিদরিদ্র মানুষের মধ্যে যে খাবার সাহায্য দেওয়া হতো তা স্থগিত করা হলো। এদের মধ্যে রাখাইন রাজ্যেই বিভিন্ন ক্যাম্পে থাকা এক লাখ ২০ হাজার মানুষ ডব্লিউএফপির খাবারের ওপরই নির্ভর করত, যাদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। গত ২৪ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে অন্তত ২৪টি পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে ‘রোহিঙ্গা বিদ্রোহীরা’ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে মিয়ানমার সরকার। এর পর থেকে রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলা-নির্যাতনে প্রায় ৪০০ রোহিঙ্গা নিহত হয়। দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় ৬০ হাজারের বেশি মানুষ।
মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) রাখাইন রাজ্যে বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে। যদিও সেখান থেকে নির্যাতনের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছে, মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত করতে দেশটির সামরিক বাহিনী তাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিচ্ছে এবং হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। অন্যদিকে এআরএসএর দাবি, তারা মিয়ানমার সরকারের সহিংসতার শিকার রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধ করছে।
নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর পরই মিয়ানমারের সরকারের পক্ষ থেকে আরো অভিযোগ করা হয়েছিল, পুলিশ ও সেনাক্যাম্পে যেসব ‘সন্ত্রাসী’ হামলা চালিয়েছে তাদেরকে গোপনে সাহায্য ও সমর্থন করছেন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে ডব্লিউএফপির কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও রয়েছেন। এমন অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা বলেছিল ডব্লিউএফপিএ। তার মধ্যেই খাবার সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা আসে জতিসংঘের এই সংস্থার পক্ষ থেকে।
তবে ডব্লিউএফপির বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, চলমান সহিংসতায় বিপদগ্রস্ত সব সম্প্রদায়ের মধ্যে সাহায্য কার্যক্রম পুনরায় শুরু করতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা করছেন তাঁরা। বর্তমান সহিংসতায় নতুন আরো যেসব লোক আক্রান্ত হবে তাদেরকেও সাহায্য দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে জাতিসংঘ। অবশ্য এর আগে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সেই অবস্থান থেকে সরে আসা এবং অভিযান বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেজ।
গুতেরেজ এই ঘটনাকে এ বছরের সহিংসতার সবচেয়ে খারাপ নজির বলেও উল্লেখ করে ‘প্রবল চাহিদার মুখে’ রাখাইন থেকে সীমান্ত পেরিয়ে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্যও বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করেছেন।
গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ২৪টি পুলিশ ক্যাম্প ও একটি সেনা আবাসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী নিরস্ত্র রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশুদের ওপর নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। জাতিসংঘের গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারে সহিংসতা শুরুর পর গত এক সপ্তাহে ৪০০ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭০ জন ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী’, ১৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দুজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ জন সাধারণ নাগরিক। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৬০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
পালিয়ে আসাদের মধ্যে কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে নদী ও সমুদ্রপথে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে নৌকাডুবিতে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। এ পর্যন্ত নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ৪০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে ২০১২ সালের জুনেও রাখাইন রাজ্য সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় আক্রান্ত হয়েছিল। তখন প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা নিহত হন। ওই সময় দাঙ্গার কবলে পড়ে প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
Our facebook page