Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জরুরি প্রয়োজন মেটাতে মাটির নিচে গড়ে তুলেছে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেলের জরুরি মজুদ। আর এ মজুদ তেল যে কোনো সময় ঘাটতি মেটাতে কাজে লাগানো সম্ভব। সম্প্রতি সৌদি আরবের দুটি তেল স্থাপনার ওপর ড্রোন হামলায় সরবরাহ সংকট তৈরির পরিস্থিতি হলে মার্কিন কর্মকর্তারা এ ভাণ্ডার থেকে তেল ব্যবহারের ইঙ্গিত করেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও জরুরি সংকট মোকাবেলায় এ তেল ব্যবহার করা হতে পারে বলে টুইট করেছিলেন।
কোথায় কীভাবে রাখা হয়েছে সেই তেল?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি তেলের ভাণ্ডার রয়েছে ভূগর্ভে। রীতিমতো সুরক্ষিত স্থানে। টেক্সাস এবং লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যের মাটির নিচে লবণের স্তরের ভেতর তৈরি গুহায় এ তেলের ভাণ্ডার তৈরি করা হয়েছে। এসব স্থানে মজুদ রয়েছে ৬৪ কোটি ব্যারেল তেল।
১৯৭০-এর দশকে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময়কার তেল সংকটের পটভূমিতে তেলের মজুদ গড়ার পরিকল্পনা করে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক জ্বালানি এজেন্সির সব সদস্য দেশকেই অন্তত ৯০ দিন ব্যবহারের মত পেট্রোলিয়ামের আমদানি ধরে রাখতে হয়। তবে জরুরি প্রয়োজন মোকাবিলার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে ভান্ডার গড়ে তুলেছে – এর মতো বড় মজুদ পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের মোট চারটি স্থানে এই জরুরি তেলের মজুদ রয়েছে। টেক্সাসের ফ্রিপোর্ট এবং উইনির কাছে, আর লুইজিয়ানায় লেক চার্লস আর ব্যাটন রুজে।
ভূপৃষ্ঠের তিন হাজার তিনশ’ ফিট নিচে লবণের খনি থেকে সৃষ্ট অনেকগুলো গর্তে বা গুহার মধ্যে এই তেল জমা করে রাখা আছে । ভূগর্ভস্থ লবণের স্তরের একটা অংশের লবণ গলিয়ে ফেলে তৈরি করা হয় এই গুহা – যাতে প্রাকৃতিক গ্যাস বা তেল রাখা যায়।
মাটির ওপরে ট্যাংকে তেল মজুদ করার চাইতে এই পদ্ধতি অনেক কম খরচের, এবং নিরাপদ। ভূগর্ভস্থ লবণের রাসায়নিক গঠন এবং ভূতাত্বিক চাপ – এই দুই কারণেই এখান থেকে তেল বেরিয়ে যেতে পারে না।
কেন তেলের মজুদ গড়েছে যুক্তরাষ্ট্র?
আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পক্ষ নেয়। এ কারণে ওপেকের সদস্য ইরাক,কুয়েত, কাতার ও সৌদি আরব আমেরিকায় তেল রপ্তানি করতে অস্বীকার করে।
সেই প্রেক্ষাপটে ১৯৭০-এর দশকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশকে তেল বিক্রি না করায় সারা পৃথিবীতেই তেলের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে গিয়েছিল। মাত্র তিন সপ্তাহেই যুদ্ধ থেমে যায় কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল ১৯৭৪ সালের মার্চ পর্যন্ত। ফলে তেলের দাম বেড়ে গিয়েছিল প্রায় চারগুণ – ব্যারেল প্রতি ৩ ডলার থেকে ১২ ডলারের কাছাকাছি।
সেই সংকট কেটে যাওয়ার পর ভবিষ্যতে যেন এমন সংকট না হয় সেজন্য মার্কিন কংগ্রেসে একটি আইন পাস করে কৌশলগত পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ গড়ে তোলা হয় ।
এই মজুদ কতদিনের জ্বালানি চাহিদা মেটাবে?
মার্কিন তথ্যমতে ১৩ই সেপ্টেম্বর সর্বমোট তেল মজুদ ছিল ৬৪ কোটি ৪৮ লাখ ব্যারেল। মার্কিন জ্বালানি প্রশাসনের হিসেবমতে ২০১৮ সালে গড়ে প্রতিদিন ২ কোটি ৫ লাখ ব্যারেল তেল ব্যবহার করেছে। সে হিসেবে এই জরুরি ব্যবস্থায় তাদের ৩১ দিন চলবে।
১৯৭৫ সালের এক আইন অনুযায়ী এই জরুরি মজুদের তেল ব্যবহারের নির্দেশ শুধুমাত্র প্রেসিডেন্টই দিতে পারেন। অবশ্য এখান থেকে তেল বের করা সহজ নয়। প্রেসিডেন্টের আদেশ পেলেও এখান থেকে তেল বের করে তা বাজার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে প্রায় দু সপ্তাহ লাগবে। কারণ এখানে তেল জমা রাখা হয়েছে অশোধিত আকারে। গাড়ি, জাহাজ বা বিমানে ব্যবহার করতে হলে এই তেলকে আগে শোধনাগারে পাঠিয়ে প্রক্রিয়াজাত করাতে হবে।
এই তেল কি কখনো ব্যবহার হয়েছে?
এই জরুরি মজুদের তেল সর্বশেষ ব্যবহার করা হয় ২০১১ সালে। সে সময় ‘আরব বসন্তের’ কারণে জ্বালানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছিল।
এছাড়া ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়র জরুরি মজুদের তেল ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিলেন। তার ছেলে প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হারিকেন কাটরিনার পর জরুরি মজুদের ১ কোটি ১০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রির অনুমতি দেন।
এছাড়া ১৯৯৭ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনও বাজেট ঘাটতি কাটাতে ২ কোটি ৮০ লাখ ব্যারেল তেল বিক্রি করেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ২০১৭ সালে জরুরি মজুদের অর্ধেক তেলই বিক্রি করে দেবার পরিকল্পনা করেছিলেন ফেডারেল ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে।
এখন অবশ্য তেলের নানা বিকল্প জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তাই এত বড় জরুরি মজুদ রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা।
Our facebook page