Latest News
কালিহাতীতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
মে ১৮, ২০২৪
গোবিন্দগঞ্জে ২১ কেজি গাঁজা জব্দ
মে ১৮, ২০২৪
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
এক মহা-‘বিষাদ সিন্ধু’ ঘটে চলেছে আমাদের চোখের সামনে, প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে ২৫ আগস্ট থেকে নাফ নদীর দু’পাশে। ‘বিষাদ সিন্ধু’র মূল কাহিনী ফোরাত নদীকেন্দ্রিক। কিন্তু ১৪০০ বছর আগের ঘটনা এখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের এমন অগ্রগতি, উৎকর্ষের যুগে ঘটছে সকাল-সন্ধ্যা, রাত-বিরাতে, বর্ষা-বাদলে টেকনাফের এপাড়-ওপাড় দুই তীরে। মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’র অনেকটুকু ছিল কল্পনাপ্রসূত। সেই সত্তর-আশি বছর আগে আমাদের শৈশবে দেখেছি, আমাদের প্রবীণদের যারা কিছুটা লেখাপড়া জানতেন, তারা সুর করে বিষাদ সিন্ধু পড়ছেন, আর বাড়ি বা গ্রামের ছেলেমেয়ে, বুড়োবুড়ি গোল হয়ে বসে সেই পঠন শুনছেন; শুনতে শুনতে চোখ মুছছেন, গলা ভারি হয়ে গিয়েছে বলে কথা বলতে পারছেন না। হাসান-হোসেনের ওপর এজিদের নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা আমরা শিশুরাও তখন শুনে চোখ মুছেছি, কখনও কখনও আসর থেকে উঠে গিয়ে একটু দূরে। এখন সেই এজিদের ভূমিকায় উঠে এসেছেন এক নারী, অং সান সু চি।
কিন্তু নাফ নদীর তীরের ঘটনা এবং বর্ণনাগুলো তো অতি কঠোর বাস্তব। নদীতীরে শিশুর লাশ পড়ে আছে; হয়তো ৫ বছর হবে শিশুটির বয়স, কিন্তু সে তার হাঁটু সমান কাদায় ২ বছরের ভাইটিকে কোনোভাবে কাঁধে নিয়ে ছোট ছোট পায়ে, ছোট ছোট কদমে হাঁটছে। হাঁটছে নিরাপত্তার খোঁজে, হয়তো কিছুটা খাবার এবং পানীয় জলের আশায়।
শিশু, কিশোর-কিশোরী, প্রবীণ পুরুষ-মহিলা, পঙ্গু, বয়সের ভারে নত, ক্লান্ত-শ্রান্ত, ক্ষুধার্ত-তৃষ্ণার্ত- তারা ছুটছে বাংলাদেশের উদ্দেশে। বাংলাদেশে যাওয়া গেলে কিছুটা খাবার, পানীয়, কিছুটা চিকিৎসাসেবা কিছুটা দেরিতে হলেও পাওয়া যাবে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যাবে নিরাপত্তা। বাংলাদেশের কেউ তাদের লক্ষ্য করে গুলি করবে না, তাদের মেরে ফেলবে না, তাদের মেয়েদের ধর্ষণ করবে না। তারা তাৎক্ষণিকভাবে ঘুমানোর কোনো জায়গা না পেলেও বেঁচে থাকার সাহস ও সহানুভূতি পাবে। তারা বেঁচে তো থাকবে বাংলাদেশে কোনোভাবে একবার পৌঁছতে পারলে।
বাংলাদেশ সরকারকে তারিফ করি। তারিফ করছে সারা দুনিয়া। প্রথমদিকে বিজিবি কঠোর অবস্থান নিলেও এখন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে কোনো বাধা দিচ্ছে না। এখন বাংলাদেশে এই শরণার্থীর সংখ্যা কি চার লাখ, না সাত লাখ? মনে হচ্ছে, রাখাইন অঞ্চলে বসবাসরত বারো-তেরো লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশকে আশ্রয় দিতে হবে। দুনিয়ার ‘মোস্ট পারসিকিউটেড পিপল’ আমাদের কাছে আশ্রয় চাইছে। আমরা তা সাধ্যমতো দিচ্ছিও।
কারণ, আমাদের একটা নৈতিক দায়িত্বও আছে এই ক্ষেত্রে। ৭১-এ আমাদের এক কোটির মতো মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল, ভারত আমাদের আশ্রয় দিয়েওছিল। আমাদের এই এক কোটি শরণার্থীর ভরণ-পোষণের খরচ কিছুটা মেটাতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তখন সারা ভারতে কোনো কোনো আইটেমের ওপর ট্যাক্সও আরোপ করেছিলেন। শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে তিনি ঘুরে ঘুরে শরণার্থীদের সাহস জুগিয়েছিলেন। সাহস জুগিয়েছিলেন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডি। টেড কেনেডি তখন বর্ষায় হাঁটু সমান কাদা-পানিতে ক্যাম্পগুলোর সামনে দিয়ে হাঁটছেন আর তার চোখের পানি আর বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে গিয়েছে- তখন লন্ডনে, টিভিতে দেখা এমন সব দৃশ্য এখনও আমাকে তাড়া করে।
দুই
মিয়ানমারসৃষ্ট এই রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্যও যে এক মহাসংকট সৃষ্টি করেছে, তার ওপর এখন একটু আলোচনা। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব, তা তো একটু আগে উল্লেখ করেছি। আজ (বৃহস্পতিবার) ভোর সাড়ে ৬টায় যখন বিবিসি বাংলার ‘প্রভাতী’ অধিবেশনটি শুনতে শুনতে এই কলামটি লিখছি, তখন এই বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে প্রবেশের প্রতিক্রিয়া স্থানীয়দের মধ্যে কেমন, তার ওপর বলছিলেন উখিয়া উপজেলার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন সেনোয়ারা বেগম। বিপন্ন রোহিঙ্গাদের মেহমানদারি করা তাদের দায়িত্ব এবং তারা তা সাধ্যমতো করেও যাচ্ছেন, তবে বিশাল সংখ্যার কারণে যে বিশৃঙ্খলা ঘটছে, সে কারণে সবাইকে ঠিকমতো দেয়া যাচ্ছে না, বলছিলেন এই ভদ্রমহিলা। সেনোয়ারা বেগমের এমন উদারতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
কিন্তু একইসঙ্গে উদ্বেগটাও তো কম ‘সিরিয়াস’ নয়। আমার আশঙ্কা, এই রোহিঙ্গাদের কেউ তো রাখাইনে ফিরে যেতে চাইবে না। কারণ, সেই ১৯৭৮ সাল থেকে যে ব্যাপকভাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর এমন অত্যাচার-নির্যাতন, ধর্ষণ, হত্যা চালাচ্ছে, তা-ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির জমানায়, তা যে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে। এমনটিই বলছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জাইদ আল হোসেন এবং জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি। দুনিয়ার এক নম্বর বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’ প্রভাবশালী মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যান রাইটস ওয়াচ’ এবং আর আর সংগঠনও এমনটিই বলছে। আজ সকালে টিভিতে জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলতে শুনেছি, রোহিঙ্গাদের এক-তৃতীয়াংশ গ্রাম, সংখ্যা ১৭৬, পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
’৭৮ এবং ’৯২তে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নিতে বাধ্য হয়েছিল। কিন্তু গত ২৫ বছর ধরে রোহিঙ্গারা আসছে তো আসছেই। তাদের কেউ কি ফেরত নিয়েছে?
তারপর গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রতীক হিসেবে সারা বিশ্বে এই আট-দশ বছর আগেও যিনি নন্দিত হলেন, সেই অং সান সু চির জমানাতেই যদি এমন জাতিগত বিদ্বেষ এবং গণহত্যা চলতে থাকে, তাহলে কোন্ ভরসায় এই রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাদের নিজ দেশে ফিরে যাবে? এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতেই হয় যে, ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা সেই ৭০ বছর আগে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত হল, তারপর থেকে তারা শরণার্থী শিবিরেই আছে। তাদের দুর্দশাকে আরবরাই এখন আর তেমন গুরুত্ব দেয় না।
যদি এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে না চায়, তো তাদের নিয়ে আমাদের সরকার করবেটা কী? তারাই বা এই ক্যাম্পগুলোতে কত বছর অনিশ্চিত জীবনযাপন করবে?
এখনেই আশঙ্কাটা। ফিলিস্তিনিরা একটা সময় ‘মিলিট্যান্সি’কে। একমাত্র বিকল্প হিসেবে দেখতে থাকে। বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফ অঞ্চলেও কি তা একসময় দেখা দেবে? তারপর কি তা সারা দেশে, দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়বে না?
না, এখানে শুধু পাকিস্তান বা তার আইএসআইএর আগ্রহ থাকবে না। চেচেনরাও আগ্রহী হবে, আগ্রহী হবে ফিলিপিনসের আবু সাইফ, সোমালিয়ার আল শাবাব গ্রুপও। আর আল কায়দা তো ইতিমধ্যে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। আশঙ্কা, নানান কিসিমের মিলিট্যান্ট গ্রুপ দ্বারা তখন বাংলাদেশ আক্রান্ত হবে। অবশ্য প্রধান টার্গেট থাকবে মিয়ানমার। কিন্তু মিয়ানমার যে অন্ধ হয়ে গিয়েছে হিংসা-বিদ্বেষে। গৌতম বুদ্ধের অনুসারীরাও যে এমন হিংস্র হয়ে উঠবে ভাবাই যায় না।
তিন
এই মহাসংকট মোকাবেলায় আমাদের সরকারের সক্ষমতা নিয়েও অবধারিতভাবে প্রশ্ন উঠবে। আমরা কেমন দুর্বল এবং নীতি-আদর্শ অনুসরণে সঙ্গতিপূর্ণ নই, তার সর্বসাম্প্রতিক লজ্জাজনক উদাহরণ হচ্ছে- চাল কিনতে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের গত সপ্তাহে সস্ত্রীক মিয়ানমার সফর। একদিকে যথার্থ কারণেই মিয়ানমার এবং তার নেত্রীকে আমরা নিন্দা করছি, তার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি, জাতিসংঘের মহাসচিব পর্যন্ত মিয়ানমারকে উদ্দেশ করে কঠোর, ‘টাফেস্ট’ ভাষা ব্যবহার করে ‘এথনিক ক্লিনিজিং’ বন্ধ করতে দাবি করছেন, সেখানে খাদ্যমন্ত্রী যেন ‘হানিমুন’ বা ‘পিকনিক’ করতে মিয়ানমার গেলেন!!
এই উদাহরণ থেকে দেশে চাল-সংকট এবং চালের নিয়ন্ত্রণহীন দামের বিষয়টা সামনে চলে আসে। তারপর গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধান বিচারপতিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করা হয়েছে আবার। তার মানে, বিভিন্ন পত্রিকায় সংযম দেখানোর জন্য গাফ্ফার চৌধুরীর এতগুলো কলামের কোনো আছর পড়েনি জাতীয় সংসদের কোনো কোনো সদস্যের ওপর।
রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখতে বিদেশের এতসব সাংবাদিককে কক্সবাজারে নিয়ে সরকার একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছে। কিন্তু এসব সাংবাদিক তো একই সঙ্গে দেশের বিরাজমান সুশাসনের প্রকট অভাবটাও দেখে যাবে! তারপর আরও বড় হুমকি- ইসলামী গ্রুপগুলো জুমার নামাজের পর যেমন বিশাল বিশাল মিছিলের প্রদর্শনী দেখিয়ে যাচ্ছে, তাতে আমি অশনিসংকেত দেখতে পাচ্ছি। এ ক্ষেত্রে মনে হচ্ছে, তারা দেশের অসাম্প্রদায়িক শক্তিকে পেছনে ফেলে দিয়েছে।
এক বছরের মাথায় আগামী অক্টোবরে যদি সাধারণ নির্বাচনটি সঠিক, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়, সেই নির্বাচনে এই বিষয়গুলো কী এবং কেমন প্রভাব, প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তাও দেশ-বিদেশের পর্যবেক্ষকরা গভীর মনোযোগের সঙ্গে দেখবে। মনে রাখতে হবে, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহের সৃষ্টি করে দিয়েছে সারা দুনিয়ায়।
আমাদের সরকারের এই একটি বড় অর্জন, রোহিঙ্গা সংকটের দিকে দুনিয়ার বিভিন্ন পেশা-বয়স এবং জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সফল হয়েছে এবং এই আগ্রহ অব্যাহত থাকবে বলে মনে হয়।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিশাল চেম্বারে অনেক রকমের সংগঠন এবং প্রতিনিধি ছাড়াও প্রতিটি সদস্য দেশের জন্য পাঁচটি করে আসন নির্বাচিত থাকে। কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্য ছাড়া অন্য সদস্যদের প্রত্যেকের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের ছোট চেম্বারে মাত্র একটি করে আসন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, তা-ও সব সময়ে পূর্ণ থাকে না। কিন্তু আজ ভোরে কয়েকটি আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেলে নিরাপত্তা পরিষদের যে ছবি কয়েক সেকেন্ডের জন্য দেখলাম, তাতে ছোট চেম্বারটি পূর্ণই দেখলাম, তার মানে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আগ্রহ রয়েছে।
চার
নিরাপত্তা পরিষদের সভাশেষে যে বিবৃতিটি পরিষদের সভাপতি বিরাট সংখ্যার সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শোনালেন, তাতে মিয়ানমারের আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং দ্রুত অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধের দাবিও জানানো হয়।
এখানে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষ্য করতে হবে। নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা একটি বিবৃতি প্রকাশে সম্মত হয়েছে। এটি কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদের কোনো সিদ্ধান্ত, ‘রেজুলিউশন’ নয়। সেই অর্থে নিরাপত্তা পরিষদ প্রত্যাশিত দায়িত্ব পালন করেনি। বিবৃতি চরিত্রগতভাবেই রেজুলিউশনের তুলনায় দুর্বল। আমাদের ‘পরীক্ষিত বন্ধু’ চীনের কারণে তা সম্ভবও ছিল না। চীন তো আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তারা মিয়ানমারের পক্ষেই থাকবে। শক্ত কোনো রেজুলিউশন নিতে গেলে বাধা দিতে ভেটো প্রয়োগ করবে। তারপরও প্রশ্ন, সিদ্ধান্ত নিলেই বা কী হতো? চীন তো মিয়ানমারের পক্ষেই থাকছে। চীনের ১৮ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ আছে এই দেশে (এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে আট হাজার কোটি টাকা)। এ ছাড়া মিয়ানমারে প্রভাব বিস্তারে ভারত এবং চীনের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতাও চলছে। চীন কোনো ছাড় দেবে না ভারতকে মিয়ানমারে।
আমাদের দুর্ভাগ্য, ঘনিষ্ঠতম বন্ধু হিসেবে যে ভারত এবং চীনকে মর্যাদা এবং গুরুত্ব দিয়ে এসেছি, তারাই এখন আমাদের পাশে নেই। এখানেই আমাদের ব্যর্থতা। ভারত তো ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিই ব্যবহার করে না, মিয়ানমারের অনুরোধে।
চীন ’৭১-এ আমাদের ঘোরতর বিরোধী ছিল। জাতিসংঘে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভারতকে নোংরা ভাষায় অনেক গালাগাল করেছে। পাকিস্তানকে দেয়া তাদের অস্ত্র আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা এবং বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করতে ভূমিকা রেখেছে। চীন ২৪ বছর জাতিসংঘে ঢুকতে পারেনি। ১৯৭১-এ ঢুকেই প্রথম ভেটোটি প্রয়োগ করল ১৯৭২-এ যখন আমরা জাতিসংঘে সদস্যপদের আবেদন করলাম। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশের বিরুদ্ধেই চীনের প্রথম ভেটো!!
চীনের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আমরা গত ৪৬ বছরে কত কিছুই করলাম, তাদের পুরনো সাবমেরিন দুটো ১৫ বিলিয়ন ডলারে কিছুদিন আগে কিনলাম, আরও কতসব অস্ত্রশস্ত্র ’৭৫-এর পর। আমাদের রাস্তাঘাট, পদ্মা সেতু নির্মাণের কত সব টেন্ডার তারা পেল। আমাদের আরও মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ১৫ দিন পর ৩১ আগস্ট ১৯৭৫-এ চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
অপমান করে চলেছে মিয়ানমার, বারবার। হাল আমলে সেনাবাহিনী দিয়েই যে এক দেশ আরেক দেশের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাবে, তা তো নয়। ১৬ বছর আগে ৯/১১-তে নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে বিমান দিয়ে যে হামলা চালানো হল, তাতে তো ছিল ১৯ জন সিভিলিয়ান। মিয়ানমারও বারবার লাখ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে পাঠিয়ে তেমন আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সমাজ-অর্থনীতির ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। কিন্তু আমরা এত ‘শান্তিপ্রিয়’ দেশ যে, আমরা শান্তিপূর্ণভাবেই সংকট মোকাবেলায় বদ্ধপরিকর!!
কিন্তু আমাদের অনেককে বেকুব বানিয়ে ছেড়েছে ভারত। চীন এবং ভারত মাত্র এক মাস আগেও ভুটান সীমান্তের ডোকলামে প্রায় সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এই দুটো দেশই আবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে জানি ‘দোস্ত’ হয়ে গেল!!
এক বছর পর, আগামী সাধারণ নির্বাচনে ভারতের এই আচরণও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করি।
মহিউদ্দিন আহমদ : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব; কলাম লেখক।
নোট: যুগান্তর থেকে নেয়া।
Our facebook page