আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে ভোটারশূন্য নির্বাচন করতেই রাজশাহীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেখানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ‘সন্ত্রাসী’ তাণ্ডব চরম আকার ধারণ করেছে অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘মঙ্গলবার (১৭ জুলাই) নগরীর সাগরপাড়ায় জেলা ছাত্রদলের গণসংযোগ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এ সময় আওয়ামী দুষ্কৃতিকারীরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে গুরুতর আহত হন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির কর্মী স্বপন কর্মকার এবং সাংবাদিক পরিতোষ চৌধুরী আদিত্যসহ বেশ কয়েকজন।’
‘তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচন খুলনা ও গাজীপুরের মতো হবে’— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে রিজভী বলেন, ‘সেই আলামত ফুটে উঠতে শুরু করেছে।’
‘রাজশাহীতে ধানের শীষের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় ককটেল হামলা নতুন নির্বাচনী মডেলের আরেকটি প্রাথমিক পদক্ষেপ। আতঙ্কিত পরিবেশ তৈরি করে ভোটারশূণ্য নির্বাচন করতেই এই হামলা’— বলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব।
‘দেশে গণতন্ত্র আছে বলেই বিএনপি দলীয় কার্যালয়ে প্রেস কনফারেন্স করতে পারে, আর প্রধানমন্ত্রীকে সমালোচনা করে বক্তব্য দিতে পারে’— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী নেতারা মূঢ় অহংকারের কারণে বিস্মৃতিপ্রবণ হয়ে পড়েছেন। তারা কি ২০১৩ সালে পুলিশ ঢুকিয়ে কার্যালয় তছনছ করে বিএনপি মহাসচিব ও সিনিয়র নেতাসহ ১৫৪ জন নেতাকর্মীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার কথা ভুলে গেছেন?’
‘কয়েকদিন আগে জাতীয় সংসদে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে যে উদ্ভট, অলীক, অসংসদীয়, অশ্রাব্য কটূবাক্য প্রধানমন্ত্রী ব্যবহার করেছেন, সেটি কোন গণতান্ত্রিক রীতিতে পড়ে? বিএনপিসহ বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের অনুমতি না দেওয়া কোন গণতান্ত্রিক রীতিতে পড়ে? শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলা কোন গণতান্ত্রিক রীতি? মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করা কোন গণতান্ত্রিক রীতি?’— প্রশ্ন রাখেন রিজভী।
‘বেগম খালেদা জিয়া নতুন কোন রোগে আক্রান্ত হননি, তাকে যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর সরকারি ব্যবস্থাপনার বাইরে বেগম জিয়াকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়’— স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, ‘তারা বিএনপি চেয়ারপারসনকে নিয়ে গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে।’
‘লোক মুখে প্রচারিত কথাই সত্য হচ্ছে। রাজনীতি থেকে খালেদা জিয়াকে চিরতরে সরিয়ে দেওয়ার জন্যই তার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকে চরম অবনতির দিকে ঠেলে দিতেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার সরকার এক নোংরা খেলায় মেতে উঠেছে’— বলেন রিজভী।
তিনি জানতে চান, ‘কোন ব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাবন্দী থাকা অবস্থায় স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন? কোন ব্যবস্থাপনায় অন্যান্য আওয়ামী সিনিয়র নেতাদের চিকিৎসা হয়েছিল রাজধানীর ল্যাবএইড বা বারডেমে?’
‘সুতরাং খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ করে দেওয়াই যে সরকারের উদ্দেশ্য, তা আবারও স্পষ্ট হলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে’— বলেন রিজভী।
‘দেশে কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুমের ঘটনা ঘটছে না। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে অথবা দু’টি মনের মিলনে উড়াল দিচ্ছে, আর বলা হচ্ছে গুম’— স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই কেবল এই ধরনের উদ্ভট, ভারসাম্যহীন, অসত্য কথা বলে নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগণের সাথে নিষ্ঠুর রসিকতা করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ রাখতে এমন বানোয়াট ও অসত্য বক্তব্য দেওয়া ছাড়া তার কোনো উপায় নেই। প্রতিদিন বিচারবহির্ভূত হত্যার হিড়িক চলছে। গুম করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষকে।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ অন্যরা।