Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সম্প্রতি ছাত্র রাজনীতি উত্তাল হয়ে উঠেছে যাকে ঘিরে, সেই বিতর্কিত ছাত্রনেতা উমর খালিদ দেশের টিভি চ্যানেলগুলোকে লেখা এক খোলা চিঠিতে অভিযোগ করেছেন তারা যেন রোজ স্টুডিওতে তাকে ‘বিনা বিচারে গণধোলাই’ দিয়ে যাচ্ছে।
গত এক বছর ধরে দেশের নানা টিভি চ্যানেল তার বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ ছাড়াই লাগাতার উসকানিমূলক কথাবার্তা বলে চলেছে, আর তার জেরে তাকে ক্রমাগত মেরে ফেলার হুমকি ও শাসানিও শুনতে হচ্ছে বলে উমর খালিদ জানিয়েছেন।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির বিশ্ববিদ্যালয় জেএনইউ-তে দেশবিরোধী বক্তৃতা দেওয়ার অভিযোগে উমর খালিদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, কিন্তু এখনও পুলিশ তার বিরুদ্ধে কোনও চার্জশিট জমা দিতে পারেনি।
শনিবার দিল্লিতে ভারতের পার্লামেন্টের ঠিক সামনে সংসদ মার্গের ছাত্র বিক্ষোভে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন ছাত্র-নেতা উমর খালিদ।
গত মাসে দিল্লির রামযশ কলেজে তাকে একটি সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানোকে কেন্দ্র করে যে বিতর্কের শুরু, তার জেরে এখনও উত্তপ্ত হয়ে আছে দিল্লির ক্যাম্পাস রাজনীতি। চলছে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ-সমাবেশ।
এমনই এক সভায় উমর খালিদ অভিযোগ এনেছেন, দেশের বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল ঠিক এক বছর আগের পুরনো চিত্রনাট্য টেনে বের করে আবার ‘দেশদ্রোহ বনাম দেশভক্তির নাটক’ পেশ করে যাচ্ছে, আর তাতে তাকে দেশবিরোধিতার জন্য সরাসরি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনও সুযোগ না-দিয়েই।
রবিবার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে পাঠানো এক খোলা চিঠিতে এই একই কথা লিখেছেন তিনি। আর বলেছেন তাদের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের কারণেই তাকে রোজ মেরে ফেলার হুমকি পেতে হচ্ছে, এমন কি পরিবারের সদস্যরাও বাদ যাচ্ছেন না।
উমর খালিদের কথায়, “শাসকদের রাষ্ট্রবাদের সংজ্ঞার সঙ্গে আপনার বক্তব্য না-মিললেই আপনার বিরুদ্ধে গুণ্ডামি শুরু হয়ে যাবে। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি মিডিয়ার একটা অংশও এই অপচেষ্টায় হাত মিলিয়েছে।”
“টিভিতে রোজ যা দেখানো হচ্ছে তাতে আমার মা ভয় পেয়ে যাচ্ছেন আবার কবে আমাকে গ্রেফতার করা হবে। আমার বোনকে পর্যন্ত ধর্ষণের হুমকি পেতে হচ্ছে – আর এর সবই হল আমাদের চুপ করানোর চেষ্টা।”
বস্তুত গত বেশ কয়েকমাস ধরেই ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলে উমর খালিদকে তুলে ধরা হয়েছে এমন এক খলনায়ক হিসেবে যে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিষিয়ে তুলেছেন।
তবে এই সব অভিযোগের স্বপক্ষে মিডিয়া কোনও প্রমাণ পেশ করতে পারেনি, এমন কী বছর ঘুরে গেলেও দিল্লি পুলিশ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছে উমরের বিরুদ্ধে চার্জশিট আনতে।
কিন্তু তার পরেও কেন উমর খালিদ আক্রমণের নিশানা?
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নির্মলাংশু মুখার্জির মতে কারণ সে কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদী বা মাওবাদী বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতিশীল – এবং উমর খালিদ মুসলিম।
তিনি বিবিসিকে বলছিলেন, “জেএনইউ-র অত্যন্ত মেধাবী ও প্রগতিশীল ছাত্র উমর খালিদ, যে কাশ্মীরী আফজাল গুরুর ফাঁসির প্রতিবাদে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল। তখন থেকেই কাশ্মীরের আন্দোলনের সঙ্গে তার নামটা সমার্থক হয়ে গেছে।”
“তা ছাড়া সে গবেষণা করে মাওবাদী অধ্যুষিত বস্তারে রাষ্ট্রের নির্যাতন নিয়ে। কাজেই যেখানে রাষ্ট্রীয় আধিপত্যবাদ, তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটা মুখ হয়ে উঠেছে সে। তার উপর তার নামটা মুসলিম, ফলে সঙ্ঘ পরিবারের জন্যও সে পছন্দের নিশানা”, বলছিলেন অধ্যাপক মুখার্জি।
বিজেপির ছাত্র শাখা এবিভিপি-র নেতা সতীন্দর আওয়ানা আবার মনে করেন, উমরের মতো দেশদ্রোহীকে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকাও যেমন ঠিক হয়নি – তেমনি তার আসাও ঠিক হয়নি।
সতীন্দর আওয়ানার সাফ কথা, “ও না-এলে তো এতসব গণ্ডগোলই হয় না। মতপ্রকাশের অধিকারের কথা বলে দেশের নামে একজন গালিগালাজ করে যাবে, আমরা কি বসে বসে শুনব না কি? এমন লোককে আমরা ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেব না, এটা আমাদের শেষ কথা।”
এবিভিপি-র এ ধরনের বক্তব্যে এখন দেশের গণমাধ্যমের একটা বড় অংশও সুর মেলাচ্ছে, উমর খালিদের চিঠির মূল অভিযোগটা সেখানেই।
তবে দেশের কোনও বড় চ্যানেলের পক্ষ থেকেই এখনও কোনও জবাব পাননি ২৯ বছরের এই যুবক, যিনি নিজেকে শুধু ‘একজন কমিউনিস্ট’ বলে পরিচয় দিতেই ভালবাসেন।
Our facebook page