Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
সম্প্রতি মোবাইল ফোন ব্যবহারে নতুন এক বিড়ম্বনা শুরু হয়েছে। অকারণ ফোন ধরে বিভিন্ন কম্পানির বিপণনের লোকদের কথা শুনতে হয়।
সময়-অসময়ে কল। প্রতিদিন বহু টেক্সট মেসেজ তো আছেই। হঠাৎ হঠাৎই কল। ব্যাংক থেকে শুরু করে সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান, ইনস্যুরেন্স, হাউজিং বা রিয়েল এস্টেট, প্লট, ফ্ল্যাট, ফিক্সড ডিপোজিট, ক্রেডিট কার্ড, এই কার্ড, সেই কার্ড, হাজারো রকমের সুবিধার প্রলোভনের কল। হয়তো জরুরি কোনো কাজে আছি, বেজে উঠল ফোন। ভদ্রোচিতভাবে সালাম দিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে নানা কথা বলে একপর্যায়ে এসে বাণিজ্যিক আলাপটি শুরু করল।
এতে যে কাজটি করছিলাম তাতে আর মনোযোগ রাখা যায় না। হঠাৎই বিরক্তির উদ্রেক করে। তাদের কথাগুলোর জবাব দেওয়াও কঠিন। এমনকি কথা চালিয়ে যাওয়াও মুশকিল। ফোন কেটে দেওয়ার অভ্যাসও নেই। সব মিলিয়ে এ এক নতুন ধরনের বেকায়দা। মাঝেমধ্যেই বিষয়গুলো নিয়ে আমার সহকর্মীদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। সকাল থেকে নানা কাজে থাকতে হয়। আজকের যুগে সকালে ফোন খোলার পর নিজের প্রয়োজনেই অসংখ্য কল করতে হয়। আবার প্রয়োজনীয় মানুষের ফোন ধরে কথা বলার বিষয় তো আছেই। কিন্তু এর মধ্যেই যদি এসব বিরক্তিকর ‘কল’ সামলাতে হয়, তাহলে আমাদের মতো মানুষের মাথা ঠিক থাকবে কিভাবে? আমি জানি না, আমাদের মতো যাঁরা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্বে আছেন বা সারা দিন মানুষ নিয়ে কারবার করেন তাঁরা কিভাবে এগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করেন। প্রশ্ন জাগে, তাঁরা এই আকস্মিক ‘কল’ ও অজস্র টেক্সট মেসেজ পান কি না। খোঁজখবর করে জানলাম, ফোন কম্পানি থেকে ‘প্লাটিনাম’, ‘স্টার’ বা ‘আইকন’ গ্রাহকদের নাম ও নম্বরের তালিকা নিয়ে কম্পানিগুলো যথেচ্ছ ব্যবহার করে। আবার যাদের ফোনে বেশি ‘কল’ এমন নম্বরকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে পৃথকভাবে বাছাই করার ব্যবস্থাও রয়েছে, সেই নম্বরগুলোকে বিশেষ নম্বর হিসেবে সরবরাহ করা হয় কল সেন্টার বা বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে। এগুলো তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রমের একটি অংশ। এর জন্য তারা টাকা দিয়ে ‘চটকদার’ কথা বলার মতো ছেলে-মেয়ে রেখেছে। তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় ও কর্মসূচি ঠিক করে দেওয়া আছে, সে অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করে। মানুষকে বিরক্ত করাই একটি করপোরেট দায়িত্ব (?)—কী এক আজব সময়ে আছি আমরা!
আমি প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫টি অবাঞ্ছিত কল এবং ২০ থেকে ২৫টি টেক্সট মেসেজ পাই। জানি ফোনসেটে নম্বর ব্লক করার একটি সুযোগ রয়েছে। কিন্তু দেখি, একেকবার একেকটি নম্বর থেকে কল আসে। চিন্তা করি, আমার ফোন নম্বর আমি কাকে কাকে দিয়েছি। খুব বেশি মানুষের কাছে তো আমার নম্বর নেই। এরপর ভাবি গুরুত্বপূর্ণ কেউ হবেন হয়তো। কিন্তু ফোন ধরেই সেই বিড়ম্বনা। আমি বরাবরই একটি ফোন ব্যবহার করি। একাধিক ফোন ব্যবহারের উদ্যোগও নিয়েছি। কিন্তু একটি ফোনই সামাল দিয়ে উঠতে পারি না। এখন থেকে ১০-১২ বছর আগে আমি একবার ফোন নম্বরই পাল্টে ফেলেছিলাম নানা রকম অবাঞ্ছিত ফোনকলের অত্যাচারে। এখন আর ফোন নম্বর বদলানোরও সুযোগ নেই। জানলাম, ফোন নম্বর বদলেও রেহাই পাওয়ার সুযোগ নেই। ফোন কম্পানিগুলোই এ ধরনের বাণিজ্যিক কারবারিদের সহায়ক। আমার মতো আরো বহু মানুষের নম্বর এভাবে বিপণনভিত্তিক ‘কল সেন্টার’গুলোতে তারা কিভাবে বা কোন শর্তে সরবরাহ করে, তা আমি জানি না। তবে নিশ্চয়ই এখানে কোনো বাণিজ্যিক লেনদেন রয়েছে। কিন্তু আমার দৃষ্টিতে আমার ফোন নম্বরটি গড়পড়তা প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজটি মোটেও শোভন নয়, এমনকি এক ধরনের অপরাধ।
যারা এ ধরনের কল করে, এমন অনেক তরুণ-তরুণীর সঙ্গে আমি কথা বলেছি। জিজ্ঞেস করেছি, আপনি জেনেবুঝে আমাকে ফোন করেছেন কি না। তাঁরা বলেন, জি স্যার, আপনার নাম-পরিচয় জেনেই ফোন করেছি। তখন আর বলার কিছুই থাকে না। আমার ব্যস্ততার মধ্যে এ ধরনের একটি ‘কল’ অবাঞ্ছিত হিসেবে জানালে তাঁরা বলেন, স্যার, এটি আমাদের জব, কিছু করার নেই। আমাদের কম্পানি থেকে একটি টার্গেট দেওয়া আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই টার্গেট আমাকে পূরণ করতেই হবে। অনেকেই বিব্রত ও বিরক্ত হন। এটিও আমরা জানি। অদ্ভুত এক বিষয়। এ যেন এক ধরনের জুলুম।
চলমান আধুনিক সময়ে যখন পণ্য বিপণনে ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে মানুষের সুযোগ-সুবিধার কথা চিন্তা করা হয়, কোনোভাবেই কাউকে হয়রানি না করার কথা বলা হয়, তখন জোর করে ফোনে বাক্যবিনিময়ের এই কারবার কোন ধরনের শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে, প্রশ্ন জাগে। কে জানে, আমরা হয়তো একটি সন্ধিক্ষণে আছি। হয়তো পরবর্তী সময়ে এ অবস্থায় পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আমাদের মোবাইল ফোন কালচারের দুই দশক পূর্তির পরও আমরা কেন এর ব্যবহারের আদবকেতা আয়ত্তে আনতে পারছি না, সেটাই বিস্ময়ের ব্যাপার।
বিষয়টি নিয়ে দু-একটি ফোন ও ইন্টারনেট প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলেছি। জেনেছি, বর্তমান সময়ে ফোন কম্পানিগুলোর বিপণন ও প্রচার বিষয়ে এসএমএসের একটি বাণিজ্য রয়েছে। তারা যেকোনো প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের প্রচারের জন্য তাদের গুরুত্বপূর্ণ গ্রাহকের নম্বরগুলোতে খুদে বার্তা পাঠানোর দায়িত্বটি নিয়ে নেয়। এ জন্য রীতিমতো একটি ব্যবসাও প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। বিনা অনুমতিতে একজনের মোবাইল ফোনে যথেষ্ট এসএমএস পাঠানোর প্রশ্নে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ও বেপরোয়া। অন্যদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় দায়িত্বশীলদের নম্বর, যাঁরা ফোন ব্যবহার বেশি করেন তাঁদের নম্বরসহ বাণিজ্যের প্রশ্নে কাঙ্ক্ষিত গ্রাহকের নম্বরগুলো সংগ্রহ ও সরবরাহ করার জন্যও একটি ব্যবসায়ী শ্রেণি রয়েছে, তারা বাণিজ্যিক ভিত্তিতেই কাজগুলো করছে।
আমি মনে করি, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি অথরিটি বিটিআরসির অনেক করণীয় আছে। তারা বিষয়টিকে আমলে নিয়ে বেআইনি তৎপরতাগুলো বন্ধের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। বোধ করি, বিষয়টি খোদ টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীও উপলব্ধি করে থাকতে পারেন। কারো বাড়িতে অনধিকার প্রবেশের মতোই কারো নম্বরে অনধিকার প্রবেশের ব্যাপারে অবশ্যই নিয়ম-নীতি রয়েছে। বিষয়টির আরো গভীরে গিয়ে তলিয়ে দেখে এ ব্যাপারে একটি কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য উদ্যোগ নেওয়া হবে—সেই প্রত্যাশা করছি।
লেখক : পরিচালক ও বার্তাপ্রধান চ্যানেল আই।
নোট: কালের কন্ঠ থেকে নেয়া।
Our facebook page