Latest News
কালিহাতীতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
মে ১৮, ২০২৪
গোবিন্দগঞ্জে ২১ কেজি গাঁজা জব্দ
মে ১৮, ২০২৪
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
বার্মা সফরের সময় গত মঙ্গলবার পোপ ফ্রান্সিস রাষ্ট্রের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন। এতে তিনি যা উচ্চারণ করেছেন তা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, যা উচ্চারণ করেননি হয়তো তা-ও ততটুকু গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি কী বলতে পারেন তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিল—সামরিক বাহিনীর ‘নির্মূল অভিযান’-এর শিকার সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে তিনি ‘রোহিঙ্গা’ অভিহিত করবেন কি না।
বার্মায় (মিয়ানমার নামেও পরিচিত) রোহিঙ্গা মুসলিমদের স্বতন্ত্র সম্প্রদায় হিসেবে স্বীকার করা হয় না, যদিও তাদের অনেকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেখানে বাস করছে। বার্মার সরকারি কর্তৃপক্ষ ও সংখ্যাগুরু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অনেকে এই জনগোষ্ঠীকে ‘রোহিঙ্গা’ বলতে নারাজ; তারা তাদের ‘বাঙালি’ বলে। এর পক্ষে তাদের যুক্তি বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়; তারা বোঝাতে চায়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসা অভিবাসী।
গত মঙ্গলবার একটি আন্ত ধর্মসভায় এবং এর পরের ভাষণে পোপ এই মুসলিম সম্প্রদায়ের পরিচয় হিসেবে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন। এতে অনেকে স্বস্তি বোধ করেছে, আবার অনেকে অখুশি হয়েছে। ভাষণ দেওয়ার আগে তিনি বার্মার নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন। দেশের ভেতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের এত বড় ঘটনায় নিস্পৃহ থাকার কারণে সু চি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সমালোচিত।
পোপ তাঁর ভাষণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর আহ্বান জানান। বিবিসি জানিয়েছে, পোপ তাঁর ভাষণে বলেন, ‘শান্তি স্থাপনের উদ্যোগের মধ্যেই মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ নিহিত। শান্তির ভিত্তি হতে হবে সমাজের প্রত্যেক সদস্যের মর্যাদা ও অধিকারের প্রতি সম্মান, প্রত্যেক নৃগোষ্ঠী ও তার পরিচয়ের প্রতি সম্মান, আইনের শাসনের ওপর আস্থা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি সম্মান। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর থাকলে প্রত্যেক ব্যক্তি, প্রতিটি গোষ্ঠী—কেউ অস্বীকৃত নয়, সাধারণ কল্যাণের লক্ষ্যে আইনসম্মতভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে। ’
বার্মার ক্ষুদ্র ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায় পোপের কাছে আরজি জানিয়ে রেখেছিল তিনি যেন ‘রোহিঙ্গা’ অভিধা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকেন। তাদের আশঙ্কা ছিল, এ অভিধা ব্যবহার করা হলে বার্মার নেতৃত্ব বিষয়টিকে অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বিদেশি হস্তক্ষেপ মনে করতে পারে।
পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, ধর্মীয় নেতা হিসেবে পোপ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি তাঁর সমর্থনের ব্যাপারে আরো জোর দিতে পারতেন। তিনি তো তাঁর পূর্বসূরিদের মতো এতটা সংযত নন। অনেকবার তাঁদের সংযম-রীতি ভেঙেছেন তিনি। রাজনৈতিকভাবে অভিধাটি অস্বস্তিকর হতে পারে; কিন্তু তাদের সত্যিকার পরিচয় তো তা-ই (রোহিঙ্গা)। তিনি সে কথা উল্লেখ করতে পারতেন। সফর শুরুর আগে তিনি ‘আমাদের রোহিঙ্গা ভাই-বোন’ উল্লেখ করে তাদের জন্য দোয়া করেছিলেন। বার্মায় গিয়ে রোহিঙ্গা শব্দ উচ্চারণ না করায় তিনি সমালোচিত হচ্ছেন। উদ্বাস্তু, শরণার্থীদের বিষয়ে তিনি সব সময় উচ্চকণ্ঠ। ফলে তাঁর এই সংবরণ বিশ্ববাসীর কাছে স্ববিরোধী আচরণ মনে হতে পারে। যারা একদিকে খ্রিস্ট ধর্ম রক্ষার কথা বলে, অন্যদিকে শরণার্থী ও ভিন্ন ধর্মের বিরুদ্ধে কথা বলে, তাদের স্ববিরোধিতাকে তিনি সমর্থন করতে পারেন না—আগে এমন কথাও তিনি বলেছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক উপপরিচালক ফিল রবার্টসন ই-মেইলে তাঁর মন্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ‘পোপ একটি সুযোগ হাতছাড়া করলেন। তিনি মিয়ানমারকে বলতে পারতেন, প্রতিটি গোষ্ঠীরই আত্মপরিচয়ের অধিকার রয়েছে। রোহিঙ্গাদের পরিচয় অস্বীকার করা যে ভুল সে কথা প্রকাশ্যে অং সান সু চি ও মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীকে মনে করিয়ে দিতে পারতেন তিনি। ’
অনেকে মনে করে, পোপ যদি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উল্লেখ করে কথা বলতেন, তাহলে বার্মার নেতৃত্বের ওপর আরো বেশি চাপ সৃষ্টি হতো। তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর আরো নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো থেকে বিরত হতো। আবার অনেকে মনে করে, তিনি এটি করলে উত্তেজনা আরো বাড়ত। পরিস্থিতি আরো নাজুক হতো।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভিযানের কারণে গত কয়েক মাসে প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
গত সোমবার পোপের সঙ্গে বৈঠকের পর সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সামাজিক গণমাধ্যমে এক পোস্টে দাবি করেন, মিয়ানমারে ধর্মীয় বৈষম্য নেই। রাষ্ট্র ধর্মাচরণের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। পোপ মিয়ানমারের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করেছেন। বৈঠকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রসঙ্গ পোপ তুলেছিলেন কি না তা অবশ্য হ্লাইংয়ের পোস্ট থেকে বোঝা যায় না।
লেখক : জার্মানির বার্লিনে থাকেন; কূটনীতিবিষয়ক প্রতিবেদক
সূত্র : ওয়াশিংটন পোস্ট (অনলাইন সংস্করণ) ভাষান্তর ও সংক্ষেপণ : সাইফুর রহমান তারিক।
নোট: কালের কন্ঠ থেকে নেয়া।
Our facebook page