Latest News
গাজীপুরের বেশিরভাগ রাস্তাই যেন মরণ ফাঁদ
মে ২০, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ম্যান্ডারিন : গ্রহের সবচেয়ে বহুল উচ্চারিত ভাষা। ২ কিংবা ১ অনুপাতে ম্যান্ডারিন ইংরেজিকে ছাড়িয়ে অনেক শীর্ষে। ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে, এটি পৃথিবীর প্রচলিত সবচেয়ে কঠিন ভাষা। ভাষাটি কঠিন হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের প্রায় ১ বিলিয়নেরও বেশি মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ম্যান্ডারিন ভাষা সত্যিই কঠিন, কারণ এর প্রতিটি শব্দ চারটি উপায়ে উচ্চারিত হতে পারে ম্যান্ডারিন গণচীন, তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরের রাষ্ট্রভাষা। এ ছাড়া মালয়েশিয়াতেও এ ভাষার প্রচলন রয়েছে।
ইংরেজি : এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের সদস্য ভাষা। এ ভাষার ভাষাভাষী সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যেমন— নিউজিল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, ক্যারিবিয়ান, হংকং, দক্ষিণ আফ্রিকা, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাসহ সমগ্র বিশ্বে এ ভাষার ব্যবহারকারী বেশি।বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৫০৮ মিলিয়নেরও বেশি ইংরেজি ভাষাভাষী রয়েছে।
হিন্দি : হিন্দি ভারতের জনাকীর্ণ জনসংখ্যার প্রাথমিক ভাষা। এটি প্রচলিত নব্য ইন্দো-আর্য ভাষা। এটি ভারতের বিশাল উপভাষাগুলোর মধ্যে একটি যা সবার মুখে মুখে। এটি মূলত উত্তর, মধ্য ও পশ্চিম ভারতের মাতৃভাষা। দক্ষিণ আফ্রিকা, মরিশাস, বাংলাদেশ, ইয়েমেন, উগান্ডাসহ বিভিন্ন দেশের লাখো কোটি মানুষ হিন্দি ভাষা ব্যবহার করে। বর্তমানে পৃথিবীতে প্রায় ৪৯৭ মিলিয়ন মানুষ এ ভাষায় কথা বলে।
আরবি : আরবি আরবদেশের ভাষা। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশেই আরবি ভাষা ব্যবহূত হয়। যেমন— সৌদি আরব, কুয়েত, ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন এবং মিসরসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও বেশ কয়েকটি দেশে এ ভাষাভাষীর সংখ্যা অনেক বেশি। এটি সেমিটীয় ভাষা পরিবারের জীবন্ত সদস্যগুলোর অন্যতম। ইসলাম আবির্ভাবের ঠিক আগের যুগে আরব উপদ্বীপে আরবি ভাষার উত্পত্তি ঘটে। প্রাচীন কবিদের কবিতা কিংবা সাহিত্যে আরবি ভাষার ব্যবহার ছিল লক্ষ করার মতো। মধ্যযুগে আরবি গণিত, বিজ্ঞান ও দর্শনের প্রধান বাহক ভাষা ছিল। বিশ্বের বহু ভাষা আরবি থেকে শব্দ ধার করেছে। আবার অনেক ভাষা বিজ্ঞানী আছেন এখনো আরবি ভাষা নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন। ১৯৭৪ সালে আরবি ভাষাকে জাতিসংঘের ষষ্ঠ সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে প্রায় ২৪৬ মিলিয়ন মানুষ আরবি ভাষার ভাষাভাষী।
সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া টিকে থাকা ভাষা :
তুশিরো
২০০৮ সালের এক গবেষণায় জানা গেছে, মাত্র একজন লোক আছেন যিনি তুশিরো ভাষায় কথা বলতে জানেন। এটি ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরুর একটি উপজাতীয় সম্প্রদায়ের ভাষা। পেরু-ইকুয়েডরের সীমান্তবর্তী নদী টিগরা ও আওচায়াকোর আশপাশে এ ভাষার জন্ম। তুশিরো এখন পৃথিবীর অন্যতম বিচ্ছিন্ন ভাষা। তুশিরোর নিকটবর্তী অন্য ভাষাগুলোর অস্তিত্ব এখন আর নেই। গবেষণা অনুযায়ী ১৯৬১ সালে তুভার, ১৯৬৮ তে লৈকটকা, ১৯৯৪ তে কাউফম্যান ভাষা হারিয়ে গেছে পৃথিবী থেকে। এগুলো ছিল তুশিরোর নিকটবর্তী ভাষা।
তানেমা (তানিমা, তেবায়ো)
লিকি
অংগোটা
দুমি
ত্যাপ ও রাভা নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা সম্প্রদায়ের লোকদের ভাষা দুমি। এছাড়া হিমালয়ের পাদদেশের খোটাং জেলার মানুষও এ ভাষায় কথা বলছে। এক গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, বর্তমানে তিব্বতীয় এক পরিবারের ৮ জন সদস্য এ ভাষায় কথা বলছেন। এ ভাষাকে বিলুপ্তপ্রায় ভাষা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে সম্প্রতি।
চামিচুরো
পৃথিবীর ৮ জন লোক এ ভাষায় কথা বলছে। ল্যাটিন আমেরিকার দেশ পেরুর আদিবাসীদের ভাষা ছিল চামিচুরো। এ ভাষাটি প্রায় বিলুপ্তির পথে। এ ভাষার ভাষাভাষীরা বহুদিন আগে থেকেই স্প্যনিশ ভাষা আয়ত্ব করে ফেলেছে।
পৃথিবীর যত প্রাচীন ভাষা :
হিব্রু : এটি আফ্রো-এশীয় ভাষা-পরিবারের ৩০০০ বছর পুরনো ভাষা। সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ সালের দিকে এর উদ্ভব। ভাষাটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। ভাষা হিসেবে বিলুপ্ত হলেও লিখিত ভাষা হিসেবে আরও কয়েক শতক বেঁচে ছিল। আক্ষরিক লিপি থাকায় এ ভাষার ইতিহাস জানা যায়। বহু বছর ধরে, হিব্রু বেশিরভাগ পবিত্র গ্রন্থের লিখিত ভাষা ছিল যার ফলে এর নামও দেওয়া হয়েছিল ‘পবিত্র ভাষা’। উনবিংশ শতাব্দীর শেষে আবার এ ভাষার পুনর্জনম হয়। ১৯২২ সালে এ ভাষা ইসরায়েলি রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পায়। স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকেই এটা লিখিত ও কথ্য ভাষা হিসেবে ইহুদি সম্প্রদায়রা ব্যবহার করে আসছে।
তামিল : প্রায় ৫০০০ বছরের পুরনো ভাষা। ভারত, শ্রীলঙ্কা ও সিঙ্গাপুরে ভাষাটি স্বীকৃতি পেয়েছে। এটাই একমাত্র প্রাচীন ধ্রুপদী ভাষা যা আধুনিক বিশ্বে এখনো টিকে আছে। এটি মূলত প্রাচীন দ্রাবিডিয়ান পরিবারের সদস্য ভাষা। তামিল উত্তর ও পূর্ব ভারতের বেশিরভাগ মানুষের প্রচলিত স্থানীয় ভাষা। গবেষকরা খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর একটি শিলালিপিতে তামিলের অস্তিত্ব খুঁজে পান। সেই থেকেই ভাষাটির ব্যবহার এখন অব্দি চলে আসছে। খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ শতাব্দীতে প্রচলিত এ ভাষার বিকাশ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
চাইনিজ : চীনা-তিব্বতীয় ভাষা পরিবারের সব ভাষাকে একত্রে চাইনিজ ভাষা বলা হয়। ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে, চাইনিজ ভাষাগোষ্ঠীতে কয়েকটি উপভাষাগোষ্ঠী রয়েছে। প্রায় ৩০০০ বছর আগের একটি ভাষালিপি দেখে ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ১২০০ অব্দে ভাষাটির উদ্ভব। ধারণা করা হয় এটা তখনকার ঝউ বংশীয় ভাষা। সেই প্রাচীন ভাষার প্রচলন এখনো বিদ্যমান। চীনের ম্যান্ডারিন গণভাষা হলেও চাইনিজ থেকে এর কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। একসময় চাইনিজ ভাষার অনেক জাত ছিল।
গ্রিক : এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা হলেও এর কোনো নিকটাত্মীয় ভাষা নেই। তবে আরমেনীয়র সঙ্গে কিছুটা মিল রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ১৪৫০ সালের লিখিতলিপি এর নিকটতম প্রমাণ। ৩,৫০০ বছর আগের এ নিদর্শন দেখে বোঝা যায়, এটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম। হাজার বছরের প্রাচীন গ্রিক ভাষা থেকে কোইনি উপভাষার সৃষ্টি। কোইনি থেকে প্রত্ন-গ্রিক এবং সেখান থেকে আধুনিক গ্রিক ভাষার উত্পত্তি। এ ভাষা গ্রিস, আলবেনীয় ও সাইপ্রাসে সর্বাধিক ব্যবহূত। প্রাচীন গ্রিকের ইতিহাস দীর্ঘস্থায়ী এবং অনেক পুরনো।
মিসরীয় : রহস্যময় সভ্যতার মিসরীয় ভাষা অনেক পুরনো ভাষা। আফ্রো-এশীয় পরিবার থেকে এ ভাষার উত্পত্তি। মিসরীয় সভ্যতার দিকে তাকালে দেখা মিলবে বহু প্রাচীন পুরাকীর্তি ও লিখিত লিপি। গবেষকরা ধারণা করেন, খ্রিস্টপূর্ব ২০০০ থেকে ২৬০০ অব্দে মিসরীয় ফারাও মেনেসের রাজত্বকালে মিসরীয় ভাষার উত্পত্তি। প্রাচীন এ ভাষা গবেষকদের কাছে দুর্বোধ্য ছিল। খ্রিস্টপূর্ব ২৬০০ অব্দের বিভিন্ন পুরাকীর্তি এর প্রমাণ। এটি মিসরের কপটিক চার্চের লিটার্জিকাল ভাষা হিসেবে এখনো জীবিত রয়েছে। তবে ভাষাটি বর্তমানে ধর্মীয় গণ্ডিতেই আবদ্ধ।
সংস্কৃত : গবেষকরা বিশ্বাস করেন, সংস্কৃত ইউরোপীয় ভাষায় প্রচণ্ডভাবে প্রভাবিত। এটি ভারতের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ভাষা। এ ভাষার ইতিহাস প্রায় ৫০০০ বছর পুরনো। ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে ভাষাটির উত্পত্তি। এটি ঐতিহাসিক ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা এবং হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র দেবভাষা। এটি ভারতের সর্বোচ্চ শ্রেণির ভাষা। হিন্দু ধর্মের অনেক কাব্যগ্রন্থ এ ভাষায় রচিত। মজার বিষয় হলো গ্রিক ও ল্যাটিন ভাষার সঙ্গে এর বিস্ময়কর মিল রয়েছে।
লিথুয়ানিয়ান : এ ভাষাটি ইন্দো-ইউরোপিয়ান পরিবারের অন্তর্গত। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দের সময় অন্যান্য ভাষা থেকে এর বিভাজন শুরু হয়। পরবর্তীতে এ ভাষা থেকে আরও কয়েকটি ভাষা বিকশিত হয়। বিকশিত ভাষাগুলো হলো জার্মান, ইতালিয়ান ও ইংরেজি। অন্য ভাষায় রূপান্তরিত হলেও লিথুয়ানিয়ান ধীরে ধীরে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য হারাতে থাকে। এ ছাড়া বাটলিক ভাষাও ইন্দো-ইউরোপীয় পরিবারের সদস্য ভাষা। এ ভাষার বৈশিষ্ট্য প্রায় পেট্রো-ইন্দো-ইউরোপিয়ের মতো। গবেষকরা দাবি করেন খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ অব্দে এ ভাষার প্রচলন ছিল। তারা আরও বলেন, ‘যে কারণেই হোক লিথুনিয়ান ভাষার উচ্চারণ, ধ্বনি, বৈশিষ্ট্য ও ব্যাকরণের নিয়ম দেখে বোঝা যায়, এটি পৃথিবীর অনেক প্রাচীনতম ভাষা।’
ফার্সি : এটি ইরান, আফগানিস্তান এবং তাজিকিস্তানসহ আশপাশে এ ভাষার ব্যবহার রয়েছে। পারসিয়ান ভাষা শুনলে, মনের পর্দায় ভেসে ওঠে বোতল থেকে জিন বের হওয়ার দৃশ্য। কারণ, কয়েক যুগ আগেও অ্যারাবিয়ান মুভিগুলোতে এমন দৃশ্য দেখা যেত যেখানে ফার্সি কিংবা পারসিয়ান ভাষা ব্যবহার করা হতো। এ দুটি এশীয় ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারের ইরানি ভাষা। নাম আলাদা হলেও দুটি প্রায় একই ভাষা। এটি ছিল পারস্য সাম্রাজ্যের ভাষা। আধুনিক ফার্সি ভাষার উত্পত্তি হয় ৮ম শতাব্দীতে। প্রাচীন ফার্সি থেকে আধুনিক ফার্সি সামান্য পরিবর্তিত হয়েছে। শেক্সপিয়র ৯ম শতাব্দীর সংরক্ষিত লিপিতে বলেন, ‘ইংরেজি থেকে ফার্সি পড়ায় ঝামেলা কম।’
আইসল্যান্ডিক : এটি আরেকটি ইন্দো-ইউরোপীয় পরিবারের সদস্য। সেই সময় থেকে এটি উত্তর জার্মানীয় ভাষা। অনেক জার্মানীয় ভাষা বিকশিত হয়েছে ঠিকই তবে, ইন্দো-ইউরোপীয় কিছু বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। কিন্তু আইসল্যান্ডীয় ভাষা রক্ষণশীল, উন্নত এবং এর বৈশিষ্ট্যগুলো এখনো অপরিবর্তিত। আইসল্যান্ডে এক সময় নর্স ভাষার প্রচলন ছিল। ১৪০০ শতাব্দীতে নর্স ভাষা থেকে স্লাভিক ভাষা আলাদা হয়ে আইসল্যান্ডিকে রূপ নেয়। ব্যাকরণ, শব্দভাণ্ডার ও লিখন পদ্ধতিতে এ ভাষা অত্যন্ত রক্ষণশীল। ১৪ থেকে ২০ শতাব্দী পর্যন্ত এর তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই আজও প্রাচীন নর্স থেকে আইসল্যান্ডীয়র খুব একটা পার্থক্য নেই। এ ভাষাভাষীরা সহজেই শতবর্ষ আগের কাহিনীগুলো পড়তে কিংবা লিখতে পারেন।
বাসকিউ : ভাষাবিদ্যার চূড়ান্ত রহস্য বাসকিউ। ফ্রান্স ও স্পেনর কিছু সংখ্যক বাসকিউ মানুষ তাদের স্থানীয় ভাষা হিসেবে এ ভাষা ব্যবহার করত। কিন্তু এটি সম্পূর্ণরূপে রোমানীয় ভাষা থেকে আলাদা। প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো ভাষা নেই। এটি পশ্চিম ইউরোপের প্রি-ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষার অবশিষ্ট বংশধর। ভাষাবিদরা দাবি করেন, ‘কয়েক দশক গবেষণায় এমন কোনো ভাষা পাওয়া যায়নি যে এর সঙ্গে মেলানো সম্ভব।’ তবে কেউ কেউ আবার এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তাদের মতে, ‘ভাষাটি বিলুপ্ত। বর্তমানে এর নিকটাত্মীয় কোনো ভাষা নেই। মূলত জাতিগোষ্ঠীর বিলুপ্তিই এর প্রধান কারণ।’ তবে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, এটি রোমান্স ভাষায় আগমনের পূর্বেই এর অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যায়।
Our facebook page