Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
রবিউল ইসলাম »
একজন সন্তানের কাছে পৃথিবীর সবচাইতে নিরাপদ এবং নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল তার পিতা। কিন্ত সেই পিতার হাত ধরেই খুন হতে হল সন্তানকে। খুন হতে হল বিউটিকে । পিতা সায়েদ মিয়া শুধু বিউটি কে হত্যা করেনি সে হত্যা করেছে মানবতাকে , হত্যা করেছে পিতা সন্তানের সম্পর্ককে। পিতৃজাতকে কুঠার আঘাত করেছে সায়েদ মিয়া। মানবতার চরম বিপর্যয় হয়েছে। পিতা সন্তানের জায়গায় বিশাস ঘাতকতা প্রমানিত হয়েছে। একজন পিতার কাছে সন্তানের প্রতি এরকম নির্দয় নিষ্ঠুর আচরণ পেল বিউটি! তার পিতার কাছে নিরাপদ থাকতে পারলোনা।
কি অপরাধ ছিল ১৪ বছর বয়সী এই বিউটির? কি ক্ষতি করেছিল সে ? যে কারণে পাষন্ড পিতা ও কুচক্রী ময়নাগং তাকে খুন করল!
১৬ মার্চ দিবাগত রাত অনুমান ১২.০০ ঘটিকার সময় আসামীরা সুকৌশলে ভিকটিম বিউটি আক্তার (১৪) কে তার নানার বাড়ী লাখাই থানাধীন গুনিপুর গ্রাম হতে ব্রাহ্মণডোরা হাওড়ে নিয়ে আসে এবং নৃশংস ভাবে হত্যা করে ফেলে যায়। ১৭ মার্চ সকালে ভিকটিম বিউটি আক্তারের লাশ শায়েস্তাগঞ্জ থানাধীন ব্রাহ্মণডোরা সাকিনস্থ ব্রাহ্মণডোরা-গনিপুরগামী কাঁচা রাস্তার উত্তর পাশের ব্রাহ্মণডোরা পূর্বগ্রাম গাতারপাঢ় হাওড়ে আশরাফ উদ্দিনের ধানের জমির পূর্ব পাশে পতিত জায়গায় পাওয়া যায়। একই তারিখে পুলিশ বিউটি আক্তারের লাশ উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করত:ময়না তদন্তের জন্য আধুনিক সদর হাসপাতাল, হবিগঞ্জে প্রেরণ করে।
এ ঘটনায়১৮/৩/১৮ইং ভিকটিমের বাবা মো: ছায়েদ মিয়া শায়েস্তাগঞ্জ থানায় বাবুল মিয়া (৩২) এবং তার মা কলমচাঁন ওরফে আবুনী মামলা (৪৫) সহ সন্দিগ্ধ ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দাখিল করিলে শায়েস্তাগঞ্জ থানার মামলা নং-১০, তারিখ-১৮/৩/২০১৮ইং ধারা-৩৬৪/৩০২/২০১/১০৯/৩৪ পেনাল কোড মোতাবেক মামলা রুজু করা হয়।
ভিকটিমের পিতার মামলার মূল অভিযুক্ত বাবুল মিয়া (৩২) কে সিলেট জেলাধীন বিয়ানীবাজার থানা হতে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্ত বাবুল মিয়াকেপুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে ময়না মিয়ার নাম প্রকাশ পায়। সেই মোতাবেক অভিযুক্ত ময়না মিয়াকে আটক করা হয় । ময়না মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে সামনে আসে বিউটিকে হত্যাকান্ডের লোমহর্ষক ঘটনাটি। ভিকটিম বিউটি আক্তার এর কথিত চাচা আসামী ময়না মিয়ার সাথে বাবুলের খালাতো বোনের মামলা ছিল। এছাড়াও ইউপি নির্বাচনে ময়না মিয়ার স্ত্রীর প্রতিদন্দ্বী ছিল বাবুলের মা। এই দুটো বিষয়কে কেন্দ্র করে উভয়ের মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব তৈরী হয়। ০৪/৩/১৮ইং তারিখে বাবুল মিয়ার বিরুদ্ধে বিউটিকে ধর্ষণ মামলার সুযোগ গ্রহন করে ময়না মিয়া। ময়না মিয়ার কুমন্ত্রনায় ভিকটিমের পিতা ছায়েদ মিয়া, ময়না মিয়া অন্য একজনের নিষ্ঠুরতায় নিষ্পাপ বিউটিকে হত্যা হতে হল।
ঘটনার দিন (১৬/৩/১৮ইং) দিবাগত রাত অনুমান ১২.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিমের পিতা ছায়েদ মিয়ার সহায়তায় ময়না গং বিউটি আক্তার (১৪) কে সুকৌশলে তার নানার বাড়ী লাখাই থানাধীন গুনিপুর গ্রাম হতে ব্রাহ্মণডোরা হাওড়ে নিয়ে আসে এবং নৃশংসভাবে হত্যা করে ফেলে যায়। ময়না গং এরা বাবুল মিয়াকে ফাঁসানোর জন্য বিউটি কে হত্যা করে।
বিউটি হত্যার ঘটনাটি সারাদেশ জুড়ে ভাইরাল হয়। দেশ ব্যাপী উক্ত মামলার আসামী বাবুল মিয়া (৩২) কে গ্রেফতার ও তার শাস্তির দাবীতে ঝড় উঠে। দেশ বাসীর প্রাণের দাবী এবং সেই প্রত্যাশা পূরণে পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ মহোদয়ের নির্দেশে আমিসহ সকল সিনিয়র পুলিশ অফিসার, তদন্তকারী কর্মকর্তাএবং থানার অন্যান্য অফিসার ও ফোর্সের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়।
আশা করি এই মামলা নিয়ে দেশ বাসীর যে প্রত্যাশা আমরা তা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি। পাষন্ড পিতা ও কুচক্রি ময়নার ষড়যন্ত্রে হত্যা হতে হল নিষ্পাপ বিউটিকে। অপরাধ ও ষড়যন্ত্র করে কেউ পার পায়না । এই মামলার রহস্য উদঘাটনের মধ্য দিয়ে তা প্রমানিত হল।
পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করে বিউটির মত নিষ্পাপ সন্তানেরা যাতে হত্যা না হয় সে দিকে আমাদের সকলেরই দৃষ্টি দেয়া দরকার।
সামাজিক অস্থিরতা ও মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে এ ধরণের অকল্পনীয় ঘটনা ঘটছে। সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষা ও অস্থিরতা নিরসনে সকলের দায়িত্বশীল আচরণ করা পবিত্র কর্তব্য বলে মনে করি।
“সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই” এই বানী প্রতিটি মানুষের হ্রদয়ে জাগরুক থাকুক এবং কর্তব্য কর্মে তা প্রতিফলিত হোক, সেই প্রত্যাশা রইলো নিরন্তর।
লেখক:অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ সার্কেল।
নোট : ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া।
Our facebook page