Latest News
ফেনীতে গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে শিক্ষার্থী নিহত
মে ১৯, ২০২৪
বান্দরবানে বন্দুকযুদ্ধে ৩ কেএনএফ সদস্য নিহত
মে ১৯, ২০২৪
গোপালগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত- ৪
মে ১৯, ২০২৪
সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ছাব্বিশোর্ধ যুবক নজরুল কিছু টাকা জমিয়ে বিদেশে পাড়ি জমানোর স্বপ্ন দেখেন। বড় ভাইয়ের পরামর্শে তিনি প্রবাসে যাননি। সেই টাকার সঙ্গে আরও কিছু দেনার টাকা যোগ করে গড়ে তোলেন একটি ডেইরি ফার্ম। সাফল্য পেতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। অল্পদিনেই সফল হন তিনি।
তাঁর সাফল্যে স্বপ্রণোদিত হয়ে কৃষি ব্যাংক ঋণ দেয় ১৬ লাখ টাকা। একপর্যায়ে নজরুলের বিনিয়োগের অংক দাঁড়ায় ৩০ লাখ টাকা। সামনেই পবিত্র ঈদুল আযহা। ফার্মে থাকা দেশি-বিদেশি ২২টি গরুই আগামী কোরবানির হাটে বিক্রির উপযোগী। গরুগুলোও বেশ মোটাতাজা। ফার্মটিকে আরও বড় করে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
কিন্তু না। সব স্বপ্ন মাটি করে দিলো এক সন্ধ্যা। খামারে গরু রেখে নামাজে গিয়েছিলেন নজরুল। সেই ফাঁকে গরুর খাবারে বিষাক্ত দ্রব্য মিশিয়ে দেয় দুষ্কৃতিকারী! বিষক্রিয়া আর হজম হয়নি। একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আটটি গরু। গুরুতর অবস্থায় নেতিয়ে পড়ে বাকি ১৪টিও। নজরুলের চোখেমুখে এখন কেবলই অন্ধকার।
বিভৎস এই ঘটনাটি ঘটেছে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলায়। সামিয়া ডেইরি ফার্ম নামক খামারটি এখন অন্ধকারে ঢাকা। গত ১৯ জুলাই ঘটিত এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছেন নজরুল। কিন্তু চার দিনেও এ ঘটনার কুলকিনারা হয়নি। দুষ্কৃতিকারীও খুঁজে পায়নি পুলিশ।
কাউখালী থানার ওসি আব্দুল করিম জিডির সত্যতা নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, তদন্তসাপেক্ষে আসামিদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
ফার্মের মালিক মো. নজরুল ইসলাম তাজুল জানান, গত ১৯ জুলাই আসরের নামাজের পর ফার্মের গরুর জন্য খাবার তৈরি করে মাগরিবের নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান। নামাজ শেষে তিনি ফার্মে গিয়ে দেখেন ২২টি গরুর মধ্যে ৮টি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ছটফট করছে। অবশিষ্ট ১৪টিও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ছটফট করছে।
এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রাণি চিকিৎসক ধনপতি সরকারকে দিয়ে গরুগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। পরে কাউখালী প্রাণিসম্পদ অফিসে খবর দেন তিনি। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মঈনুল ইসলাম প্রায় দুই ঘণ্টা পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছান; কিন্তু তিনি পৌঁছার আগেই ৮টি গরু মারা যায়।
মারা যাওয়া আটটি গরুর বাজার মূল্য আট থেকে দশ লাখ টাকা হবে বলে জানন তিনি।
নামাজ আদায় করার সময়ের মধ্যে দুষ্কৃতকারীরা ফার্মে থাকা গরুগুলোর খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় বলে ধারণা করছিন তিনি।
তিনি আরও জানান, তার স্বপ্ন ছিল বিদেশে পাড়ি জমানোর। প্রবাসী বড় ভাইয়ের পরামর্শে বিদেশে যাওয়ার টাকা দিয়ে দেশে কিছু একটা করার চেষ্টা করেন। তাই মোটাতাজাকরণ ও দুগ্ধজাত গরুর ফার্মের জন্য ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে কৃষি ব্যাংক কাউখালী শাখা থেকে ১৬ লাখ টাকা ঋণ নেন। পরিবারের সহযোগিতা ও ব্যাংক ঋণ সব মিলিয়ে তার এ ফার্মে পুঁজি বিনিয়োগ করেন প্রায় ৩০ লাখ টাকা। প্রাথমিক পর্যায়ে দেশি-বিদেশি মিলে তার ফার্মে ২২টি গরু ছিল। ফার্মের বাইরে বিভিন্ন স্থানে বর্গা দিয়েছেন প্রায় ১০ থেকে ১২টি গরু। রাত-দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে তার চোখের সামনেই বেড়ে উঠতে থাকে গরুগুলো। কথা ছিল আগামী ঈদুল আযহায় গরু বিক্রি করে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের।
ফার্মে থাকা ১৪টি গরুও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. মঈনুল ইসলাম।
তিনি বলেন, আক্রান্ত ১৪ টি গরুকে ইনজেকশনের মাধ্যমে বিষমুক্ত করার চেষ্টা চলছে। তবে গরুর রক্তের সঙ্গে বিষ মিশে যাওয়ায় বেঁচে থাকা গরুগুলোর অবস্থাও আশঙ্কামুক্ত নয়।
কেন গরু গুলো মারা গেল এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ৮টি গরু বিষক্রিয়ায় মারা গেছে বলে মনে হচ্ছে।
মারা যাওয়ার কারণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য গরুগুলো ময়নাতদন্ত করে তার আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে ও জানান তিনি।
Our facebook page