Latest News
কালিহাতীতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
মে ১৮, ২০২৪
গোবিন্দগঞ্জে ২১ কেজি গাঁজা জব্দ
মে ১৮, ২০২৪
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। তবে গত নির্বাচনের ফলাফল বিবেচনায় এনে এবার আগেভাগেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নৌকার টিকিটে কে লড়বেন মেয়র পদে— সেই ব্যাপারটিও আগে থেকেই নির্ধারণ করতে চাইছে দল।
দেশের সবচেয়ে বড় এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী নির্ধারণের ব্যাপারটিকে যেনতেনভাবে নিতে চাইছে না আওয়ামী লীগ। তাই প্রার্থী ঠিক করে দেবেন খোদ দলীয় সভানেত্রীই। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন।
দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইঙ্গিত অনুযায়ী, গাজীপুর সিটি করপোরেশন থেকে আগামী নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের কাণ্ডারি হতে যাচ্ছেন তরুণ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। এর মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে বড় রকম চমক উপহার দিতে পারেন বলে দলীয় সূত্রগুলোর আভাস।
বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম। বঙ্গবন্ধুকন্যা তাঁকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। একইসঙ্গে তৃণমূলপর্যায়ে ভোটারদের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাহাঙ্গীরের ওই বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। জাহাঙ্গীর নিজেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার ব্যাপারে কথা বলেন নিউজ১৯৭১ডটকম প্রতিবেদকের সঙ্গে।
জাহাঙ্গীর আলম নিউজ১৯৭১ডটকমকে বলেন,‘ আমি গণভবনে গিয়েছিলাম। নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি মাঠে কাজ করতে বলেছেন। মানুষের পাশে থাকতে বলেছেন। এর বেশি কিছু এখন বলতে চাই না।’
তবে সেখানে উপস্থিত ছিলেন এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাজীপুর থেকে নৌকার টিকেট জাহাঙ্গীরই পাচ্ছেন— এমনই আভাস দেয়া হয়েছে তাঁকে। আমাদের নেত্রী যাকে গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক পদটি নিজে দিয়েছেন, মহানগরের যার রয়েছে বিশাল জনপ্রিয়তা, সেই জাহাঙ্গীরই শেষপর্যন্ত নৌকার পাচ্ছেন এমনই আভাস দিয়েছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমাকে নেত্রী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। নেত্রীর নিদেশে ইতিমধ্যে ওয়ার্ড, প্রস্তাবিত থানা এবং মহানগর কমিটিকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করে যাচ্ছি। দলের অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও আমার ভালো যোগাযোগ আছে। বিগত দিনের যে কোন সময়ের তুলনায় দল এখন অনেক শক্তিশালী এবং চাঙা।’
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘মহানগরের যানজট একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা দূরিকরণে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে মহানগরের তিন শতাধিক ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দিয়েছি। যারা নগরের যানজট নিরসনে কাজ করছে। এ ছাড়া শিক্ষাবৃত্তিসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছি। নগরের মানুষ মুখিয়ে আছে। নৌকার টিকেট পেলে বিজয় সময়ের ব্যাপার। বিজয়ী হয়েই নেত্রীর বিশ্বাসের মর্যাদা আমি রক্ষা করবো ‘
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোয়ন দেয়নি তৃণমূল আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলীয় সভানেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সবাইকে চমকে দিয়ে ভোটের মাঠের ষ্ট্রাইকার হিসেবে বেছে নেন সেই উপেক্ষিত আইভীকেই। শেষপর্যন্ত শেখ হাসিনার সেই বিশ্বাস এবং আস্থার পূর্ণ মর্যাদা বিজয়ের মাধ্যমেই রক্ষা করেছিলেন নারায়নগঞ্জের অগ্নিকন্যা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সেই আইভী।
গাজীপুর মহানগরের আওয়ামী লীগের নেতারাও মনে করছেন, নারায়ণগঞ্জের মতো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বঙ্গবন্ধুর কন্যার চমক জাহাঙ্গীর আলম। ভোটের মাঠের ষ্ট্রাইকার হিসেবে জনপ্রিয় এবং তরুণ নেতা জাহাঙ্গীরকেই বেছে নিবেন।
মহানগরের একজন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘গত সিটি নির্বাচনে মেয়র হিসেবে মনোনয়ন পেলে জাহাঙ্গীর বিজয়ী হতো। সেই নির্বাচনের পর নেত্রী বিষয়টি বুঝতে পেরে তাঁকে মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ পদটিও দিয়েছেন। আগামী মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখেই দলের সভানেত্রী জাহাঙ্গীরকে পদটি দিয়েছিলেন। দিনের আলোর মতোই পরিস্কার জাহাঙ্গীরই পাচ্ছেন নৌকার টিকেট। শুনেছি দলের হাইকমান্ড ইতিমধ্যে মাঠে নেমে ভোটারদের কাছে যেতে বলেছেন জাহাঙ্গীরকে।
মহানগর আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের জিসিসির প্রথম নির্বাচনে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে মেয়র পদে দলীয় সমর্থন চেয়েছিলেন সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম। যিনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। সেই জাহাঙ্গীর ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে নির্বাচনের মাঠে নামলে দল তাকে সমর্থন দেয়নি। সেই নির্বাচনে দল থেকে সমর্থন পেয়েছিলেন সাবেক টঙ্গীর পৌর মেয়র ও তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. আজমতউল্লা খান। তাকে সমর্থন দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মহানগরের অধিকাংশ নেতাকর্মী ও দলীয় সমর্থকরা। জাহাঙ্গীরকে নির্বাচনের মাঠে রাখার দাবিতে ওই সময় মাঠে নামেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষুব্ধরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। পাশপাশি বন্ধ করে দেয় ট্রেন চলাচলও। কাফনের কাপড় পড়ে রাস্তায় শুয়ে পড়ে হাজারো সাধারণ জনতা।
মহানগরে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে নজর পড়ে প্রধানমন্ত্রীর। জাহাঙ্গীরকে ঢাকায় তলব করে নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার এবং দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মায়ের মতো ও দলে নিজের অভিভাবক শেখ হাসিনার নির্দেশ ফেলতে পারেননি জাহাঙ্গীর। সিটি নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শুধু প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন জাহাঙ্গীর। সেই সঙ্গে শেখ হাসিনার নির্দেশ মতো নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় প্রার্থী আজমতউল্লার পক্ষে মাঠে নামেন। কিন্তু তৃণমূলের সাথে আজমত উল্লার ভালো সম্পর্ক না থাকায় বিএনপির প্রার্থী আব্দুল মান্নানের কাছে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন আজমতউল্লা।
সিটি নির্বাচনের বছরখানেক পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্তত্বপূর্ণ পদের দায়িত্বটি দেন জাহাঙ্গীর আলমকে। এমনকি সেই সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে আগামী নির্বাচনের জন্য মাঠ গোছানোর জন্যেও নির্দেশেনা দিয়েছিলেন।
অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর সেই নির্দেশনাই বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রের খবর।
Our facebook page