Latest News
কালিহাতীতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
মে ১৮, ২০২৪
গোবিন্দগঞ্জে ২১ কেজি গাঁজা জব্দ
মে ১৮, ২০২৪
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
বৃষ্টি হলেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় বাংলাদেশের বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।
গত সপ্তাহে বৃষ্টি এবং জোয়ারের পানির কারণে নগরীর প্রধান ব্যবসাকেন্দ্র খাতুনগঞ্জে পুরো তিনদিন লেনদেন বন্ধ ছিল।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের অনেকেই বিবিসির কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী বলা হলেও বছরে বছরে জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়ছে যা ব্যবসাকে হুমকিতে ফেলেছে। তারা মনে করেন, এই সঙ্কট থেকে পরিত্রাণে জাতীয় পর্যায় থেকে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গুদাম এবং আড়তগুলোতে ভিজে যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত পণ্য রাস্তায় বিছিয়ে রাখা হয়েছে।
পানি নেমে যাওয়ার পর রোদে শুকিয়ে কিছুটা উদ্ধার করা যায় কিনা, বাজারটির ব্যবসায়ীদের এখন সেই চেষ্টা চলছে। চাল,ডাল,তেলসহ সব ধরণের ভোগ্যপণ্যের জন্য দেশের বৃহত্তম এই বাজারে ক্রেতাদের ভিড়ে ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততার চিরচেনা পরিবেশ এখন দেখা যায়নি। সবকিছু যেনো স্থবির হয়ে আছে।
গত সপ্তাহে জলাবদ্ধতায় পাইকারি বাজারটি তিনদিন বন্ধ ছিল। এই খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের অনেকে বলছেন, পরিস্থিতি তাদের হতাশায় ফেলছে।তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
দশক দশক ধরে প্রতিবছরই জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। এবছর পাঁচ দফায় জলাবদ্ধতায় তাদের অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এই ক্ষতি তাদের নিজেদেরই পুষিয়ে নিতে হবে, সেটা তারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিয়ে আতংক থেকে মুক্তি মিলবে কিনা,এটিই এখন বড় প্রশ্ন সেখানকার ব্যবসায়ীদের।
চট্টগ্রাম চেম্বার্স অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি মাহবুবুল আলম বলছিলেন, জলাবদ্ধতার সমস্যা তাদের ব্যবসাকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।
“শুধু খাতুনগঞ্জে নয়, চট্টগ্রামে বিভিন্ন জায়গায় অনেক গুদাম রয়েছে। জলাবদ্ধতায় সব জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। ফলে প্রায় পাঁচশ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও পানিতে অনেক পণ্য নষ্ট হয়েছে। অনেক কন্টেইনারেও পানি ঢুকেছে।”
এই ব্যবসায়ী নেতা আরও বলেছেন, চট্টগ্রামের সমস্যা নিয়ে সকলে উদ্বিগ্ন। কিন্তু সমাধানের জন্য প্রকৃত বা কার্যকর উদ্যোগ নেই।
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার নেতিবাচক প্রভাব দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরের আমদানি রপ্তানির উপরও পড়েছে।
স্থানীয়ভাবে একটা অভিযোগ উঠেছে, সেখানকার সিটি করপোরেশনের মেয়র আজম নাসিরউদ্দিন এবং নগরীর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম, তারা দু’জনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাথে সম্পৃক্ত।তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিষ্ঠান দু’টি বিভিন্ন পরিকল্পনা নিলেও সমন্বয় নেই। তারা দু’জনই এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
চট্টগ্রামের শীর্ষ স্থানীয় গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আবু তৈয়ব মনে করেন, জাতীয়ভাবে উদ্যোগ ছাড়া চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান সম্ভব হবে না।
“গত কয়েকদিনে জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি রপ্তানি বন্ধ ছিল। এটা শুধু চট্টগ্রামের নয়, সারাদেশের আমদানি রপ্তানির বিষয়। পোশাক শিল্প বা যেকোন রপ্তানিমুখী শিল্প বলেন, তার সিংহভাগই এই বন্দর দিয়ে হয়। ফলে এখানকার জলাবদ্ধতার সমস্যাকে স্থানীয় সমস্যা হিসেবে দেখলে, সেটা ভুল করা হবে।”
তবে চট্টগ্রামের মেয়র আজম নাসিরউদ্দিন দাবি করেছেন, চট্টগ্রামের গুরুত্ব বিবেচনা করেই সিটি করপোরেশন তাদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে স্থায়ী সমাধানের পরিকল্পনা নিচ্ছে।
চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আব্দুস সালামও বলেছেন, তাঁরা ছয় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিচ্ছেন।
স্থানীয়ভাবে এসব প্রকল্পের কথা বলা হলেও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা এখন জলাবদ্ধতার সংকট সমাধানের জন্য সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকে হস্তক্ষেপ চাইছেন।
Our facebook page