Latest News
কালিহাতীতে বজ্রপাতে দুই ভাইয়ের মৃত্যু
মে ১৮, ২০২৪
গোবিন্দগঞ্জে ২১ কেজি গাঁজা জব্দ
মে ১৮, ২০২৪
রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
ইয়াবায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ শিগগিরই সংসদে বিল আকারে তোলা হবে। এরই মধ্যে আইনের খসড়া একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি চূড়ান্ত করেছে। নতুন এই আইনে ইয়াবার গডফাদার, নির্দেশক, পরামর্শক ও মজুতকারীদের বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। একইভাবে সেবনকারী, বহনকারী ও উৎপাদনকারী প্রত্যেকের জন্য আলাদাভাবে শাস্তির বিধান থাকছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ যদি মাদক বিষয়ে কোনও অপরাধ করে তাহলে তাকেও সাধারণ অপরাধীদের মতো শাস্তির আওতায় আনা হবে বলে জানা গেছে।
আইনটিকে সময়পযোগী করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী রবিবারও (৩ জুন) একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দীন বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন।
মো. জামাল উদ্দীন বলেন, “নতুন আইনে ইয়াবাকে ‘ক’ ক্যাটাগরির মাদক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে।”
এছাড়াও নতুন এই আইনে মাদকদ্রব্যের নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ, মজুতকারী ও গডফাদারদের ছাড় পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। মাদক যদি কারো কাছে নাও পাওয়া যায়, কিন্তু সে মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত— এমন তথ্য পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে মাদকের পরিমাণ অনুযায়ী অভিযোগ আনা যাবে। অন্যদিকে চাহিদা হ্রাস, অপব্যবহার ও চোরাচালান প্রতিরোধ এবং মাদকদ্রব্যের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের বিষয় নতুন আইনে সংযুক্ত করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত এই আইনের খসড়া চূড়ান্ত। শিগগিরই এটি পাসের জন্য সংসদে তোলা হবে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের যাচাইবাছাইয়ের কাজ। নতুন এই আইন প্রণয়নে গঠিত কমিটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সদস্য বলেন, “মাদকের আইনটিকে নতুন করে সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশ মাদক সংক্রান্ত তিনটি কনভেনশনে সই করেছে। ওই কনভেনশনে যে গাইডলাইন রয়েছে, তা অনুসরণ করে আমরা কাজ করেছি। আমাদের মূল সমস্যাটা ইয়াবা নিয়ে। আমাদের নতুন আইনে ইয়বাকে আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। ইয়াবা তৈরিতে আমরা যেসব উপাদান পেয়েছি, এর মধ্যে ৯০ শতাংশ উপাদান হলো মেথঅ্যামফিটামিন বা অ্যামফিটামিন। এছাড়াও আরও যেসব উপাদান রয়েছে সেগুলো আমরা সব ‘ক’ ক্যাটাগরিতে রেখেছি। যাতে কেউ ওই সব উপাদান ব্যবহার করে ইয়াবা প্রস্তুত না করতে পারে।”
তিনি বলেন, ‘মূল আইনের ৬ ও ৭ নম্বর ধারায় অপরাধ সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। অপরাধ অনুযায়ী ১৫ বা ১৬ নম্বর ধারায় শাস্তির মেয়াদ উল্লেখ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড রাখা হয়েছে।’
মোট তিনটি ক্যাটাগরিতে ইয়াবায় সাজার ধরন রয়েছে, ০ থেকে ১০০ গ্রাম মাদকের জন্য এক বছর থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর, ১০১ গ্রাম থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত ৫ থেকে ১০ বছর শাস্তি এবং ২০১ গ্রাম থেকে আরেকটি ক্যাটাগরিতে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড সাজার বিধান রাখা হয়েছে। অর্থাৎ পরিমাণের ওপর নির্ভর করবে শাস্তির মেয়াদ। সাধারণত ১ হাজার ইয়াবায় ২০০ গ্রামের বেশি ওজন হয়।
বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক ও সাহিত্যিক ডা. মোহিত কামাল বলেন, ‘ইয়াবার আসক্তি মারাত্মক ও প্রাণঘাতী। ইয়াবা সেবনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, মস্তিষ্ক বিকৃতি, রক্তচাপ বৃদ্ধি, হার্ট অ্যাটাক, ঘুমের ব্যাঘাত, কিডনি বিকল, চিরস্থায়ী যৌন অক্ষমতা, ফুসফুসের প্রদাহ ও ক্যানসার হতে পারে। এ ছাড়া ইয়াবায় অভ্যস্ততার পর হঠাৎ এর অভাবে সৃষ্টি হয় হতাশা। এই মাদক প্রতিরোধ করা উচিত এখনই। অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।’
গত ৭-৮ বছরে মাদক হিসেবে ইয়াবা মহামারি আকার ধারণ করে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে যখন মাদক আইন হয় তখন ইয়াবার ছোবল সমাজে ভয়ঙ্করভাবে ছিল না। দিনে দিনে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় এই নতুন আইন করতে যাচ্ছে সরকার।
Our facebook page