‘তৃতীয় পুরুষ’ নাটকটি সার্চ দিলাম ইউটিউবে। পর্দায় ভেসে উঠলো- ‘মেয়েরা কিভাবে পরকীয়া করে দেখুন’। তৃতীয় পুরুষ এসেছে বটে, সঙ্গে এনেছে পুরুষ-নারী সংক্রান্ত যত্তসব কুখাদ্য। যেগুলো কেউ হজম করে, কাউকে বিব্রত করে।
আমি কী এসব দেখতে চেয়েছিলাম? আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এডাল্ট। এসব দেখতেই পারি। আশংকাটা অন্য জায়গায়।
ভার্চুয়াল যুগের শিশু-কিশোরেরা সুযোগ পেলেই স্মার্ট ফোন কিংবা ট্যাব নিয়ে বসে যায়। সস্তা ইন্টারনেটের সুবাদে যুক্ত হয়ে যায় গ্লোবাল দুনিয়ায়। ইউটিউব ওরা ইন্সটল করে নেয় সবার আগে।
নারী-পুরুষ সংক্রান্ত যৌনতার সঙ্গে সেই বয়সে ওরা পরিচিত নয়। কিন্তু ফোর-জি গতিতে ওদের বুদ্ধিমান সু-পুরুষ কিংবা সু-নারী বানিয়ে দেওয়ার ভাণ্ডার এই ইউটিউব। বিনে খরচায় এখান থেকেই ওরা পেয়ে যাচ্ছে সব রকমের দীক্ষা!
আজকাল সামাজিক অবক্ষয়, এটি এক নীরব ঘাতক। হয়তো চোখে দেখা যাচ্ছে না। ভেতরটা কিন্তু খেয়ে ফেলছে। ছেলেমেয়েদের মস্তিষ্কের ভেতরে এসব কী ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে? এর জন্য কোনো ব্যক্তি বিশেষকে দায়ী করা যাবে না। দায়ী গোটা সিস্টেম।
একবার বলা হলো- পর্ণোসাইটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। সেটি কতদূর জানি না। ওবায়দুল কাদের এক ঘোষণায় ২৩টি মহাসড়ক থেকে তিনচাকার যান তুলে দিয়েছেন। রগচটা কথা আর ঘাড়ত্যাড়া সিদ্ধান্তে অটল থেকে তিনি শেষপর্যন্ত সফল।
তারানা হালিম কেন পারলেন না? তিনি কী ভেবেছিলেন, এগুলো বন্ধ করে দিলে সরকার পড়ে যাবে? মোটেও না। এই যৌনতার সাইট কিংবা ইউটিউব কেবল সরকারি দলের জন্যে নয়, সব দলের সব মতের মানুষের জন্যেই হুমকির।
আমার এক নিকটাত্মীয় নিজের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ার বিষয়টি বলছিলেন। তাঁর ছেলে দুটো বড় হচ্ছে। দুজনই স্মার্ট ফোন আর ট্যাব নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করে। একদিন কী একটা দরকারি তথ্য পেতে ইউটিউবে সার্চ দিলেন। পাশে যেসব ছবি ভেসে তিনি উঠলো, দুই পাশে থাকা ছেলে দুটোর মুখের দিকে আর তাকাতে পারছিলেন না। লজ্জায় যেন নিজের মুখটাই লাল হয়ে যায়!
তাঁর মতে, ‘ছেলেরা হয়তো ভাববে, বাবা এসবই দেখে। এটি খুবই লজ্জার একটি বিষয়। এরপর থেকে আর কখনো দরকারি জিনিষ খুঁজতে ওই সাইটে যেতেও ভয় হয়। ছেলেদের হাতে মোবাইল ফোন দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকা যায় না।’
আমার ছেলে বড় হলে জগত চেনাতে একদিন হয়তো আমিও ওকে একটি স্মার্টফোন তুলে দিব। আধুনিকায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে এবং পৃথিবীকে দ্রুত চিনতে-জানতে এই ভার্চুয়াল জগতটা নিঃসন্দেহে অনন্য।
কিন্তু সেটির সঙ্গে ওকে পরিচিত করতে গিয়ে চোখের সামনে যদি এসে পড়ে অনাকাঙ্খিত কোনো লিংক বা ছবি কিংবা ভিডিও, তখন আমি মুখ লুকাবো কী করে?
ইউটিউব বন্ধ কোনো সমাধান নয়। এসব নিয়ন্ত্রণও কী অসাধ্য?